মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ৫ ১৪৩০
|| ০৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০
‘ভাস্কর্য মূর্তি নয়, শিল্প’। এই তথ্যোল্লেখ জায়েজিকরণ অর্থে নয়, বলছি জ্ঞানদানের নিমিত্তে। এরবাইরে যা বলছি তা হলো- কেবল ভাস্কর্যই নয়, মূর্তি ভাঙারও অধিকার কারও নাই। কে সম্মান প্রদর্শন ও শৈল্পিক চিন্তায় ভাস্কর্য নির্মাণ করবে, কে আরাধনার জন্যে মূর্তি নির্মাণ করবে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এই ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি। এই হস্তক্ষেপ অপরাধতুল্য, এর শাস্তিও আছে বিধানে। চরমোনাই-মামুনুল কিংবা একই গোত্রের ধর্মব্যবসায়ীরা এই বিধানের বাইরে থাকার সুযোগ নাই।
সরকার বঙ্গবন্ধুর মূর্তি নয় ভাস্কর্য নির্মাণ করতে চায়- এই আলোচনা বিভ্রান্তজনদের জন্যে প্রাসঙ্গিক হলেও দূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে অপরিণামদর্শী। কারণ এতে করে যে বার্তা প্রকাশ পায় তা হলো কেবল ভাস্কর্য হলে ভাঙা যাবে না, মূর্তি হলে সেটা ভাঙা যাবে; এটা শুভ লক্ষণ নয়। এই বার্তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে ভাস্কর্য হোক, মূর্তি হোক এর কোনোকিছুই ভাঙা যাবে না, এই অধিকার কারও নাই।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে চরমোনাই পীর, মামুনুল হকসহ ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাদের যে আপত্তি সেটাকে স্রেফ ঘটনাক্রমে তোলা কোনো দাবি নয়। তারা এবার রাজধানীতে যে শোডাউন করেছে সেটা পূর্বপরিকল্পিত এবং সরকারকে চাপে ফেলে দাবি আদায়ের কৌশল। এর প্রমাণ মেলে খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের কথাতেই। ২২ নভেম্বর মামুনুল হক তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে ‘‘ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন, মাহফিলে বাধা, একজন মাশরাফি বিন মর্তুজার আলাপন ও আমাদের পরবর্তী ভাবনা’’ শিরোনামের নাতিদীর্ঘ এক লেখায় এই আন্দোলন যে তাদের পরিকল্পিত এক আন্দোলন এবং মাঠ গরমের আন্দোলন সে সত্য স্বীকার করেছেন।
ওই লেখায় মামুনুল হক জানাচ্ছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় পরিস্থিতি তৈরি করতে তিনি এবং চরমোনাই পীর রেজাউল করিম দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, এবং সে লক্ষ্যে তারা ধূপখোলা মাঠে বড় সমাবেশ করেছেন। মামুনুল হক ওখানে লিখেন, ‘‘…ফরিদ মসউদ সাহেবের কথা তাদের কাছে যুক্তিপূর্ণ মনে হয়েছে বিধায় তারা আমার সাথে কথা বলতে এসেছেন। আমি তাদের দীর্ঘ কারগুজারী শুনলাম। তাদের মনোভাব বুঝলাম। আর তাদের প্রতি আমার সমর্থন ও যে কোনো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলাম।
সেমতে প্রাথমিক কথা এমনই সাব্যস্ত হলো যে, আমি এবং ফয়জুল করিম ভাই আমাদের দুজনকে রেখে একটা বড় রকমের মাঠ প্রোগ্রাম করা হবে। এমন একটা খসড়া পরিকল্পনার আলোচনা করে তারা আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। এরপর ১৩ নভেম্বর বাদজুমা ধুপখোলা মাঠে বড় রকমের সমাবেশ হল।’’ এই মাঠগরমের পরিকল্পনার মাঝে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মসউদও যে আছেন সেটা মামুনুল হকের এই স্বীকারোক্তি থেকেই স্পষ্ট। হেফাজতের এই নেতার লেখায় আরও জানা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর সেতুর পাশে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়েও তাদের আপত্তি এবং তারা সেটা যেকোনো মূল্যে রুখে দিতে চায়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ করতে এবং সেটা নির্মাণ করা হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে বলে যে হুমকি দিয়েছেন ধর্মব্যবসায়ী চরমোনাই পির, মামুনুল হকগংরা সেখানে তারা ধর্মকে উপস্থাপন করেছে সুক্ষ্ণভাবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়