• শুক্রবার ০২ জুন ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩০

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৪

দৈনিক খাগড়াছড়ি

সম্প্রীতির বার্তা দেয় ঈদ

দৈনিক খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৩  

ছবি- সংগৃহীত।

ছবি- সংগৃহীত।

ফুরিয়ে আসছে বরকতময় মাস রমজান। সমাগত মুসলমানদের আনন্দময় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। হাটে-বাজারে মার্কেটে সবদিকে চলছে ঈদের প্রস্তুতি। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করার জন্য মানুষ ছুটছে আপন নীড়ে। কোরবানির ঈদের তুলনায় এ ঈদের আনন্দটা একটু বেশিই হয়। আর আনন্দটা বেশি হবেই না কেন! এ ঈদ আসে দীর্ঘ একমাস কঠোর কৃচ্ছ্রতা এবং সিয়াম সাধনার পর। রোজা, তারাবিহ, ইতেকাফ এবং কোরআনুল কারিমের তিলাওয়াতের আমল করে যারা নিজেদের আমলনামার ঝুলি সমৃদ্ধ করেছে তাদের জন্য ঈদুল ফিতর পুরস্কারের দিন।

এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ঈদুল ফিতরের দিনে ফেরেশতারা রাস্তার কিনারায় দাঁড়িয়ে যায় এবং ডেকে ডেকে বলে, হে মুসলমান, সকাল সকাল আপন দয়াময় প্রভুর দিকে চলো যিনি তোমাদের ওপর কল্যাণ ও বরকতের বিশাল অনুগ্রহ করবেন এবং তোমাদের অগণিত অনিঃশেষ সওয়াব দান করবেন। তোমাদের রাতের নামাজের নির্দেশ করা হয়েছে তোমরা তা আদায় করেছ এবং তারাবিহ পড়েছ। তোমাদের রোজা রাখার নির্দেশ করা হয়েছে, রোজা রেখে তোমাদের রবের নির্দেশ মান্য করেছ এবং আনুগত্য প্রদর্শন করেছ। তাই তোমরা নিজেদের পুরস্কার অর্জন করো। যখন বান্দা ঈদের নামাজ শেষ করে বের হয় তখন একজন ফেরেশতা ঘোষণা করে, জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ি যাও। আজ পুরস্কারের দিন। এ দিনের নাম আসমানে পুরস্কারের দিন। (মাজমাউজ জাওয়াঈদ, হাদিস: ৩২২৫)

প্রত্যেক জাতিরই বিশেষ কিছু দিন থাকে, যাতে এ জাতির লোকেরা নিজেদের আকিদা-বিশ্বাস এবং প্রথা অনুসারে দিবসগুলো পালন করে। ভালো পোশাক পরে। ভালো খাবার খায়। মিলেমিশে আনন্দমুখর কিছু সময় কাটায়।

রাসুল (সা.) যখন মদিনায় আগমন করলেন দেখলেন যে, মদিনার মানুষেরা দুটি উৎসব পালন করে। মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এ দুই দিন কেমন? তারা বললো, বর্বরতার যুগে আমরা এ দুদিন আনন্দ-বিনোদন করে কাটাতাম। মহানবী (সা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা এ দুই দিবসের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দিন তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। একটি হলো ঈদুল আজহা, আরেকটি ঈদুল ফিতরের দিন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৪)

হাদিসটি দ্বারা বুঝা যায়, ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাকে অস্বীকার করে না; বরং চাহিদা পূর্ণ করে। খুশি-আনন্দ প্রকাশ মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। 

এ আনন্দ ও খুশি প্রকাশের পদ্ধতি—মানুষ যেহেতু বিশ্ব জাহানের অধিপতির বান্দা তাই বান্দা প্রভুর দরবারে নিজের বন্দেগি প্রকাশ করে তার সন্তুষ্টির উপযুক্ত হয়ে যাওয়া। যে বান্দার মনিব তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে তার জন্য এরচেয়ে বেশি খুশির কারণ আর কী হতে পারে? আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এ হিসেবে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জন্য খুশির দিনে আনুগত্যের নির্দেশ করে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায়ের গুরত্বারোপ করেছেন। এটাই ঈদের আসল প্রাণ। এ দিনের মূল কাজ হলো বান্দা নিজের আমল দিয়ে প্রকাশ করা যে, বাস্তবেই সে রবের অনুগত। আর এমন বান্দারই প্রকৃতপক্ষে আনন্দ করার হকদার।

বারবার ফিরে আসে এমন এক আনন্দের নাম ঈদ। তবে এটি নিছক কোনও আনন্দ অনুষ্ঠানের নাম নয়; বরং এর রয়েছে সদূর তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রসারী ভূমিকা। যারা শুধু খেলাধূলা ও আনন্দ করে দিন কাটায় ঈদ তাদের জীবনে কোনও পরিবর্তন বয়ে আনবে না। তাদের জন্য এটি আনন্দ মেলা বৈ কিছু নয়।

ঈদ আসে সাম্যের বার্তা নিয়ে। উর্দুতে একজন বলেছিলেন, ঈদ কাপড়ো ছে নেহি, আপনো ছে হুতি হ্যায়। (ঈদ কাপড়ে নয়, ঈদ হয় মানুষকে আপন করে নেওয়ার মাধ্যমে)। ছোটদের ঈদ হতে পারে নতুন কাপড়-চোপড়ে তবে বড়দের ঈদ হবে মানুষকে কাছে টানার মাধ্যমে। আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেওয়ার মাধ্যমে।

আজ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমরা একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এখন যোগাযোগ হয় ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ আর টেলিগ্রামে। কিন্তু প্রতি বছর ঈদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সরাসরি দেখা-সাক্ষাতও জীবনের অংশ। পরস্পর দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে ভালোবাসা বিনিময়ের প্রচলন আছে এখনও। সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে অকেজো। ঈদের নির্মল আনন্দে ভেসে যায় মনের সব হিংসা-বিদ্বেষ। অন্তরাত্মা হয়ে ওঠে পরিচ্ছন্ন।

ঈদ যেন মানুষের জীবনে আজাবের কারণ না হয়। এমন যেন না হয় যে, ঈদের দিনে আল্লাহর হুকুম এবং ইসলামি শরিয়তের কোনোই তোয়াক্কা করা হলো হলো না। নতুন কাপড়, নতুন জুতা, নতুন বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্র, আতর-সুগন্ধি, ভালো খাবার, ঈদ মোবারক এবং গলাগলিকেই যেন শুধু ঈদ মনে না করা হয়। চিন্তা করতে হবে, আমরা কি রমজানের হক আদায় করেছি? দান-সদকার অভ্যাস বানিয়েছি? জানের ফিতরা সদকাতুল ফিতর আদায় করেছি? জাকাতের মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধানের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি? নিজের চাহিদার চক্করে পড়ে গরিব-অসহায় মানুষের ভুলে যায়নি তো! ঈদের দিন কত গরিব মানুষ পুরোনো কাপড়ে ঈদ করে। তাদের ঘরে ভালো খাবার তো দূরের কথা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য জন্য দু’মুঠো ভাতও তাদের জুটে না। পারফিউম সুগন্ধির কথা তো তারা চিন্তাও করতে পারে না। কিছু অসহায় তো মানুষ সড়কের কিনারায়, ফুটপাতে, মসজিদের দরজায় হাত পাতলে কিছু পায়। কিন্তু তাদের কী অবস্থা যাদের প্রয়োজন থাকার পরও মানুষের কাছে চায় না বা চাইতে পারে না। জাকাতের উপযুক্ত তো অবশ্যই। কিন্তু লজ্জার কারণে চায় না। তাদের দেবে কে? তাদের খেয়াল কে করবে? আমরা কি কখনও তাদের প্রয়োজন অনুভব করি? এতিম, বিধবা অসহায়দের খেয়াল করি? সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা ভেবে দেখি? তারা তো সারাবছরই বঞ্চনার কষাঘাতে জর্জরিত থাকে। অন্তত ঈদের দিনটা তারা একটু পেটপুরে খেয়ে নির্মল হাসি হাসুক না। সবসময় ছেঁড়া-ফাটা কাপড়ে দিনাতিপাত করলেও নতুন একটা জামা দিয়ে ঈদ করুক না।

এক সময় ছিল, মদিনায় জাকাত গ্রহণকারী কেউ ছিল না। আজ অবস্থা হলো, বিত্তশালী শিল্পপতিরাও জাকাত দিতে চায় না!

সবার ঘরে পৌঁছে যাক ঈদ আনন্দ। ধুয়ে-মুছে যাক সব দুঃখ-গ্লানি। সবাই মিলে ঈদ আনন্দকে রঙিন করে তুলি। সৌহার্দ্য, সম্পীতি ও আনন্দের বার্তায় আলোকোজ্জ্বল আভায় ভরে উঠুক বছরের বাকি দিনগুলো। সবার জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময় ও উৎসবমুখর।

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]