বিজিবির
ঐতিহাসিক ফাঁড়ি উচ্ছেদ করতে চায় প্রশাসন: বাস্তবতা ও পরিণতি
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২২
ছবি- দৈনিক খাগড়াছড়ি।
মোঃ সাইফুল ইসলাম
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী রামগড় উপজেলা। নানা ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত রামগড় একসময় একটি মহকুমা ছিলো। ব্রিটিশ শাসনামলে ফেনী নদী বিধৌত রামগড় ১৯২০ সালে মহকুমা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রামগড় ছিল সেক্টর। কালের বিবর্তনে প্রায় সব মহকুমা শহর জেলায় রূপান্তরিত হলেও রামগড় সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ার অজুহাতে স্বীয় মর্যাদা হারিয়ে ১৯৮৪ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
রামগড় বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত ফেনী নদী। এ নদীটিই এ অঞ্চলের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রেখা। এই নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম মহকুমা এবং বাংলাদেশের রামগড় শহরকে বিচ্ছিন্ন করেছে। মহামুনির এখানেই রামগড়-সাব্রুম প্রস্তাবিত স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।
রামগড় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বহু ইতিহাস ধারণ করে আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন আবতাবুল কাদের চিরনিদ্রায় শায়িত আাছেন এখানেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় শত্রুদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে তিনি শহীদ হন। ঐতিহাসিকদের কাছেও রামগড়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র কম নয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর জম্মস্থান হিসেবেও রামগড় বেশ খ্যাত। আজ থেকে দুইশ বছরেরও (১৭৯৫ সালের ৩ মার্চ ফ্রন্টিয়ার প্রটেকশন ফোর্স বা রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে বর্তমান বিজিবির জম্ম) বেশি আগে রামগড়ে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনীই কালক্রমেই বিজিবি নামধারণ করে।
বর্তমানে উপজেলার উপকন্ঠে উপজেলা কোর্ট মসজিদের গাঁ ঘেষে তৎকালীন রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন বা বর্তমান বিজিবির উৎপত্তিস্থলটিকে একটি স্মৃতির ধারক দেয়াল ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। যেখানে পোড়ামাটির টেরাকোটায় লিখিত রয়েছে বিজিবির দীর্ঘ পরিক্রমার ইতিহাস।
এছাড়া এর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে বিজিবির রামগড় বিওপি (ক্যাম্প) এর অবস্থান। এর ঠিক মাঝামাঝি স্থানে অর্থাৎ তৎকালীন মহকুমার এসডিও অফিসের স্থানেই সুদীর্ঘ সময় ধরে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে রামগড় বিশেষ ক্যাম্প বা স্পেশাল বিওপি, যা ঠিক ভারত সীমান্তের একেবারে সন্নিকটে।
এর ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, উক্ত স্থানটিতে একসময় তৎকালীন মহকুমার এসডিও সাহেবের অফিস ছিলো এবং উনার বাসবভনও ছিলো কাছাকাছি, যা বর্তমানে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের অফিস হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। যাই হোক, ওই সময়ের এসডিও অফিসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে অর্থাৎ আশির দশকে রামগড় উপজেলায় পরিণত হলে উক্ত এসডিও অফিসটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে এবং সেখানেই স্থাপিত হয় রামগড়ের প্রথম বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর। যা এ অঞ্চলে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর উপদ্রবসহ চোরাচালান কিংবা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অবাদ চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।
এরপর বিজিবির ব্যাটালিয়নের কলেবর বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মানে বাঁধা থাকায় উপজেলার তৈছালাপাড়ায় (বর্তমানে যেখানে ব্যাটালিয়নস অবস্থিত) বিজিবির ব্যাটালিয়নটি স্থানান্তর করা হয় এবং পুনরায় উক্ত সীমান্তবর্তী এসডিও অফিসের স্থানটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে।
এখানে উল্লেখ্য, রামগড়ে জেলার অন্যান্য স্থানের মতো সেনা ক্যাম্প না থাকায় এখানে ১৯৮৬ কিংবা তৎপরবর্তী সময়ে শান্তিবাহিনীর নৃশংসতা বেড়ে যায় এবং সীমান্তবর্তী এসডিও অফিসের পরিত্যাক্ত স্থানটিকে ব্যবহার করে চোরাকারবারীরা অবাদে বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত শুরু করে যা বাংলাদেশের জন্য একটি নিরাপত্তা ঝুকি তৈরী করে, এছাড়া সেসময় অর্থাৎ ৯০ এর দশকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে নিরাপত্তার খাতিরে উক্ত স্থানে বিজিবি পুনরায় একটি বিশেষ ক্যাম্প (স্পেশাল বিওপি) গঠন করে এ অঞ্চলে আবারো শান্তিবাহিনীর তৎপরতা ও সীমান্তের অবাদ চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রন নেয়।
বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ৯০ এর দশকের শেষের দিকে সর্বপ্রথম বিজিবির ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ন জন্মস্থানটিকে চিহ্নিত করার প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। খাগড়াছড়ির তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার ওয়ালিউল্যাহ এর হাত ধরে সর্বপ্রথম সেখানে ছোট একটি পিলার (যার নাম দেয়া হয় “সার্থক এ জন্ম”) সম্বলিত স্মৃতি স্মারক স্থাপন করা হয়। এরপর ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় সুশীল সমাজের অনুরোধে রামগড় ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আতিক এর উদ্যোগে সেখানে নির্মিত হয় আজকের বিশাল আকারে বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মারক দেয়াল। তবে উক্ত ভূমিটি ছিলো উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন খাস ভূমি। রামগড় ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আতিক বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে অফিসিয়াল ভাবে উক্ত স্থানটি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্তি নেন।
এছাড়া বতর্মান রামগড় বিশেষ ক্যাম্প (স্পেশাল বিওপি)টি তৎকালীন এসডিও অফিস এবং পরবর্তী বিজিবির প্রথম ব্যাটলিয়ন সদর দপ্তরের স্থানেই অবস্থিত। ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে বিওপিটি স্বগৌরবে সেখানকার সার্বভৈৗমত্ব রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, রামগড়ের মতো ঐতিহাসিক একটি জনপদের বাজার, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের বাসভবন, রামগড়ের একমাত্র সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, নদী তীরবর্তী লোকজন ও বর্তমানে নির্মিতব্য স্থলবন্দরের একাংশসহ নানা স্থাপনার অবাদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এলেও সম্প্রতি উক্ত বিওপির ভূমি নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের একটি “ভূমি উদ্ধার পরিকল্পনা” পরিলক্ষিত হয়েছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক খাগড়াছড়ি প্রকাশ্যে বলেন এবং সভার কার্যবিবরণীতে সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “রামগড়ে বিজিবির অবৈধ বিওপি দখলমুক্ত করে নির্ধারিত জায়গা মডেল মসজিদ মসজিদ করা হবে। তিনি বলেন, বিজিবি রামগড় ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মসজিদের জন্য নির্ধারিত যে জায়গা অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে অবৈধ দখলকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের ও অবৈধ কাঁটাতারের বেড়া ও অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
তবে বিষয়টির উদ্রেক হয় মূলত ২০২০ সালের দিকে, যখন সরকার সারাদেশের সকল উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মানের প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। সেসময় তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভ এর পাশ্ববর্তী দীর্ঘদিনের পুরনো কোর্ট মসজিদটি ভেঙে সেখানে উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মানের পরিকল্পন করে।
এসময় ১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মানে বাঁধা থাকার বিষয়টি বিজিবির পক্ষ হতে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয় এবং মডেল মসজিদটি অন্যত্র কোন নির্ভেজাল ভূমিতে স্থাপনের পরামর্শ ও পূর্ন সহায়তার আশ্বাসও দেয়া হয়। এছাড়া কৌশলগত কারনে বিজিবির উক্ত ক্যাম্পটি কতটা গুরুত্বপূর্ন তা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়।
সেসময় বিষয়টির গুরুত্ব অবলোকন না করে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন উক্ত ভূমিটি উদ্ধারে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে চিঠি লিখে সহায়তা চায়। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিজিবির মহাপরিচালক মহোদয়ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ন উক্ত বিওপিটির স্থান পরিদর্শন করেন এবং অদূর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মডেল মসজিদটি অন্যত্র স্থাপনের অভিমত ব্যক্ত করেন।
তবে সেসময় জেলা বা উপজেলা প্রশাসন বিষয়টির কর্ণপাত না করে মন্ত্রনালয়ের দ্বারস্থ হন। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রনালয় বিজিবির নিকট বিওপিটির গুরুত্ব তুলে ধরে, কিন্তু প্রকাশ্য বিষয়টির অবলোকন বা গুরত্ব বিবেচনা না করে জেলা প্রশাসনকে উক্ত বিওপির ভূমিটি জেলা প্রশাসনকে বুঝে নেবার ও বিজিবিকে উক্ত ভূমি বুঝে নিতে জেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলা ও রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, প্রশাসন শীঘ্রই উক্ত ভূমি হতে বিজিবিকে উচ্ছেদ করে ভূমিটি দখলমুক্ত করতে একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে এখানকার হাজার হাজার একর খাস ভূমি দখল করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিভিন্ন প্রকল্প বা স্থাপনা গড়ে তুললেও তা উদ্ধারে প্রশাসনের তেমন কোন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়নি। এমন কি রামগড়ের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও আ ন ম বদরুদ্দোজা) উপজেলার তৈছালায় পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও বিশাল কয়েকটি পাহাড় ক্রয় করেন (পরবর্তীতে তিনি তা ইজারা নেয়ার কথা স্বীকার করেন)। সেখানে অন্তত ৫ একর খাস ভূমি রয়েছে বলে জানা যায়, যা দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভোগদখল করেছেন এবং পরবর্তীতে ইউএনওর কাছে বিক্রি (যা ইউএনওর ভাষায় ইজারা) করেছেন। (১)
পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন-১৯৮৯ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবিধান-১৯০০ অনুযায়ী, খাস জমিসহ কোনো জমি সংশ্লিষ্ট বিভাগের পূর্বানুমোদন ছাড়া ইজারা দেওয়া, বন্দোবস্ত করা, ক্রয়-বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না মর্মে আইন থাকলেও সেসময়কার ইউএনওর অনিয়ম করে ইজারা নেওয়া উক্ত ৫ একর ভূমি অদ্যাবধি উচ্ছেদ করে উদ্ধার করতে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের কোন তোড়জোড় না থাকলেও হঠাৎ করে নিরাপত্তাবাহিনীর একটি ক্যাম্পের ভূমি উদ্ধারে প্রশাসনের এমন তোড়জোড় এক প্রকার রহস্যের সৃষ্টি করেছে।
এ নিয়ে কথা বলেছিলাম স্থানীয় লোকজনের সাথে। সীমান্তের কূল ঘেঁষে বসবাস করা এক হোটেল ব্যবসায়ী জানালেন তাদের নানা দুশ্চিন্তার কথা। তারা কথায়, “আমরা যারা নদীর কূলে ঘরবাড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি তাদের সবারই মনে একটা অজানা আতঙ্ক থাকে সবসময়। তবে বিজিবির উপস্থিতির কারণে আমরা কিছুটা হলেও নির্ভিঘ্নে বসবাস করতে পারছি। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বাড়ির পাশের চরগুলোতে কিংবা জমিতে আমরা বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে থাকি, সেসময় নদী থেকে আমাদের পানি সরবরাহ করে জমিতে সেচ দিতে হয়। গতবছর পাশ্ববর্তী মহামুনি এলাকায় আমাদের লোকজন নদীতে কলস দিয়ে পানি আনতে গেলে বাঁধা দেয় বিএসএফ। এমনকি বন্দুক উঁচিয়ে বাংলাদেশীদের হুমকিও দেয় তারা। নানা সময় বিনা কারণে অকথ্য ভাষায় গালা-গালিও করে। এছাড়া নদীতে মাছ ধরতে নামলে কিংবা গোসলে নামলেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আমাদের এখানে বিজিবি ক্যাম্প থাকায় আমাদের সাথে অতটা আধিপত্য বা জোর দেখাতে পারে না বিএসএফ। এখন যদি বিজিবি এখান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাদেরও দীর্ঘদিনে পিতৃভিটা ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্র, অথবা বিএসএফের গুলি খেয়ে মরতে হবে।
আরেক বাসিন্দা ও সিএনজি চালক জানালেন ভিন্ন কথা, তিনি বলেন, এত বছর ধরে বিজিবি-প্রশাসন কোন বিতর্ক ছাড়াই স্ব স্ব কাজ করে আসলেও হঠাৎ করে প্রশাসনের এমন আচরণে তারা হতাশ। প্রশাসন মূলত বিজিবিকে এখান থেকে উচ্ছেদ করে উক্ত ভূমিকে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি বলে সংরক্ষনের নামে উপরমহলকে খুশি করতে মরিয়া বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাস্তবতা ও পরিণতি
উক্ত বিবাদমান স্থানটি কৌশলগত বিবেচনায় সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ন স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম। বিগত ১৯৭০-১৯৮০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের সাথে বর্ণিত স্থানে একাধিকবার গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। উক্ত সময়কালে ব্যবহৃত বাংকারসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনা অদ্যাবধিও সেখানে বিদ্যমান রয়েছে। ভবিষ্যতে উদ্ভূত যে কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় কৌশলের অংশ হিসেবে রণকৌশলগত গুরুত্বের কারণে উক্ত স্থানে বিজিবি কর্তৃক অবস্থান গ্রহণের প্রয়োজন হবে। এছাড়াও বর্তমানে উক্ত স্থানের কাছাকাছি রামগড় স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ চলছে এবং স্থলবন্দর স্থাপিত হলে সীমান্তের নিকটবর্তী এ স্থানটির কৌশলগত গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভের নিরাপত্তায় এ বিওপিটির গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাস্তবতা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের নির্ধারিত মডেল মসজিদটির উক্ত ভূমিটি সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের দেড়শ গজের ভেতরে (১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মান করা যাবে না) মোটামুটি ৩০-৫০ গজের ভেতরে, যা মোটেও সীমান্ত আইন অনুযায়ী ওখানে স্থাপন করা যাবে না, কিংবা স্থাপন করতে গেলে বিএসএফে বাঁধার মুখে পড়তে হবে। এর আগে সীমান্ত আইনের দোহাই দিয়ে রামগড় থানা ভবনের কাজে কয়েকবার বাঁধা দেয় বিএসএফ, এছাড়া রামগড় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের বহুতল ভবন নির্মানে অবিরত বাঁধার মুখে একপ্রকার থমকে আছে নির্মান কাজ। বিএসএফের সাথে বিজিবি পতাকা বৈঠক করে বারবার কাজ শুরু করলেও পরক্ষনে ফের বাঁধা দেয় বিএসএফ। এছাড়া কাশিবাড়ী-পিলাক সীমান্তের ভারতীয় অংশে সম্প্রতি স্থাপনা নির্মানেও সীমান্ত আইনে বাঁধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিজিবি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, গত ৮ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে রামগড় বিশেষ ক্যাম্পের বিপরীতে ভারতের সাব্রুমের কাঁঠালছড়ি নামক স্থানে ফেনী নদীর তীরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তাদের সাথে কাঁটাতারের বেড়ার ইস্যু নিয়ে এ বৈঠক করেন দেশটির স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সীমান্তসূত্রে পাওয়া তথ্যে জানাযায়, ত্রিপুরা সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সৃষ্ট জটিলতার কারণ প্রত্যক্ষ করতে তিনি সাব্রুম সফরে আসেন।
বৈঠকে ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, বিএসএফের মহাপরিচালক পংকজ সিংসহ সেদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ফেনী নদীরকূল ঘেঁষে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করেন।
এর আগে, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা সীমান্তের বিপরীতে কয়েকটি স্থানে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে দুদেশের যৌথভাবে অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ করার চেস্টা করলে বাংলাদেশের তরফ থেকে বাধা দেয়া হয়। এ কারণে বেড়া নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রে জানা যায়, সেদিনের বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে দুদেশের সরকার পর্যায়ে যোগাযোগের উদ্যোগ নিতে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র কাছে আবেদন জানানো হয়।
সর্বোপরি, বাংলাদেশ সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের অন্তত ২০-৩০ ও ৫০ গজের ভেতর স্থাপিত রামগড় উপজেলা অডিটোরিয়াম, উপজেলা প্রশাসনের অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসবভন, শিল্পকলা একাডেমী, রামগড় বাজার, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, থানা ভবনসহ অসংখ্য সরকারী স্থাপনা ও নদী তীরবর্তী বরবাসকারী লোকজনের নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধসহ নানা কারণে বিজিবির রামগড় বিশেষ ক্যাম্পটি কৌশলগত ও ভৌগলিক ভাবে অতি জনগুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যাম্প।
এছাড়া রামগড় স্থলবন্দরটি চালু করে ওদিকে মহামুনি বিওপি থেকে শুরু করে এদিকে রামগড় বিশেষ ক্যাম্প পর্যন্ত উক্ত সীমানাটি ভৌগলিকভাবে দুদেশের কাছেই অতি গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠবে এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে বিজিবির দায়িত্বও বেড়ে যাবে এ সীমানায়। এসময়টি সামান্য নিরাপত্তা ঘাটতি একটি বিশাল ঝুঁকি তৈরী করতে পারে দেশের সার্বভৌমত্তের।
এ অঞ্চলটিতে মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারে মাদক কারবারী, অবৈধ চোরাকারবারী, শোভা পাউডারের (যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশে পাচারের সময় বিজিবি উদ্ধার করে) মতো ব্যয়বহুল পন্য পাঁচার হতে পারে, এতে সরকারের ব্যাপক রাজস্ব কমে যাবে। এছাড়া অরক্ষিত হয়ে পড়বে সীমান্তসহ সরকারী সব স্থাপনা, বেড়ে যাবে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা, সীমান্ত ব্যবহার করে সাজেকের মতো সহজেই এদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর যাতায়াত বাড়বে ভারতে।
জনসাধারনের জান-মাল, সরকারী অর্ধশত স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের উচিত বিজিবির ক্যাম্প উচ্ছেদ পরিকল্পনা থেকে সরে এসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির মিমাংসা করা।
তথ্যসূত্র:
১. https://southeastasia-journal.com/uno-ramgar-takes-lease-of-khas-land-violating-law/
লেখক: সাংবাদিক।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
- ‘বর্তমান সরকার পাহাড়েই বেশি উন্নয়ন কার্যক্রম চালাচ্ছে’
- খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের বহুল কাঙ্খিত সম্মেলন কাল
- পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
- টাঙ্গাইল শাড়িসহ আরো ১৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
- গ্যাসের সিস্টেম লস শূন্যে নামানো হবে
- ৬ জুন সংসদে উঠবে নতুন সরকারের প্রথম বাজেট
- আবহাওয়া বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে
- তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে
- ৪৬তম বিসিএস প্রিলি আজ, মানতে হবে যত নির্দেশনা
- মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন
- বেনজীরের অর্থের হিসাব চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দুদকের চিঠি
- রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট
- ঢাকায় ভিসা সেন্টার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ব্রাজিলের : রাষ্ট্রদূত
- বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাংবাদিকদের
- বাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই : পাক প্রধানমন্ত্রী
- যৌথ সামরিক মহড়া চালাবে বাংলাদেশ ও চীন
- ভাষা সৈনিক বাদশার স্ত্রীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
- ভোট সুষ্ঠু করতে প্রতি উপজেলায় ২-৪ প্লাটুন বিজিবি: ইসি সচিব
- জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী
- থাইল্যান্ডের রাজা-রানির রাজকীয় অতিথি শেখ হাসিনা
- সাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর
- পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের কমতি নেই- প্রতিমন্ত্রী
- মানিকছড়িতে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
- দেশের এভিয়েশন শিল্পে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- ৩ শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমতে পারবে না- বিএসইসি
- বে-টার্মিনালে বিনিয়োগ হবে দশ বিলিয়ন ডলার
- ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মে থেকেই অভিযান- মেয়র তাপস
- ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করতে চায় ভারত
- মডেল ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ কৃষকের মধ্যে সাড়া
- ব্যাংক একীভূত হলেও আমানত সুরক্ষিত থাকবে
- সাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর
- ২৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
- বিলুপ্তির পথে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী
- লক্ষ্মীছড়িতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন চার প্রার্থী
- খাগড়াছড়িতে ক্রিকেট লীগ ও ভলিবলের ফাইনাল অনুষ্ঠিত
- রামগড় ব্যাটালিয়ন কর্তৃক লাখ টাকার কাঠ জব্দ
- ডিজিটাল জরিপকালে জমির মালিকদের জানাতে হবে- ভূমিমন্ত্রী
- দেশের এভিয়েশন শিল্পে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে
- পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
- হারানো মোবাইল উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করল পুলিশ
- দীঘিনালা জোন কর্তৃক বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প পরিচালনা
- চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ মাসে ৪৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি
- চার বছরেও শেষ হয়নি দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মান
- লক্ষ্মীছড়িতে অসহায়দের মাঝে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা প্রদান
- বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএফ সদস্য নিহত
- ঢাকা উত্তরের বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা পেলে জেল-জরিমানা
- পানছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাকে ভোট দিবে আওয়ামী লীগ?
- খাগড়াছড়িতে নাগরিক পরিষদের দায়িত্বে লোকমান-মাসুম
- সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক