• বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৩ ১৪৩০

  • || ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

দৈনিক খাগড়াছড়ি

কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তার নামে মামলা

দৈনিক খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

ছবি- দৈনিক খাগড়াছড়ি।

ছবি- দৈনিক খাগড়াছড়ি।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক কোটি ৩৯ লক্ষাধিক টাকা আত্মাসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নিকোলাস চাকমা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট দুটি মামলা করলো দুদক। সংস্থাটির রাঙামাটিস্থ সমন্বিত কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এই মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাঙামাটি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ। মামলা নাম্বার-১, তারিখ: ০৭/০৯/২০২৩ইং। 

মামলার আসামী নিকোলাস চাকমা বর্তমানে মূখ্য কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়, খাগড়াছড়িতে কর্মরত আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটিস্থ দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহেদ কালাম। 

দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামী নিকোলাস চাকমা, (পিএফ নম্বর: এন-১৫৩৪), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, খাগড়াছড়ি শাখা, খাগড়াছড়িতে বিগত ২৯/০৪/২০১৫ খ্রি: তারিখ হতে ১৬/১১/২০২৩খ্রি: তারিখ পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। উক্ত সময়ে কর্মরত থাকাকালীন তিনি গত ০৪/০৪/২০১৯ খ্রি: তারিখ শাখার আমানতের উপর সুদের খাত-১৩৩/৩৭ (জে) এবং ১৩৩/৩৭(অন্যন্য) খাত ডেবিট করে ৪৬/১০(প্রধান কার্যালয় হতে প্রাপ্ত সুদ খাত) স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে উক্ত ৪৬/১০ খাত হতে বিভিন্ন তারিখে ৪৭, ১৪,৭০০/- টাকা ডেবিট করে বিভিন্ন ঋণ ও সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাত করেন। গত ৩০/০৯/২০১৯ খ্রি: তারিখ শাখার বিভিন্ন আমানতের উপর সুদের খাত-১৩৩/৩৭ ডেবিট করে ১৪,৭৩,০০০/-টাকা ৪টি মেয়াদী আমানত হিসাবে ক্রেডিট করত: গত ০১/১০/২০১৯খ্রি: তারিখে উক্ত মেয়াদী আমানত সমূহ ডেবিট করে ৩(তিন) টি সিসি ঋণ হিসাবে স্থানান্তর পূর্বক সমন্বয় করত: আত্মসাৎ করেন।

এছাড়া গত ০৫/০১/২০২২ খ্রি: তারিখ শাখার বিভিন্ন আমানতের উপর সুদের খাত-১৩৩/৩৭ ডেবিট করে ৩৬,৫২, ৮১৪/-টাকা বিকাশ চাকমা এর নামে পরিচালিত সঞ্চয়ী হিসাব নং-৭৭৭০ এ স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে গত ১২/০১/২০২২খ্রি: তারিখ উক্ত হিসাব হতে উক্ত টাকা ডেবিট করে ২টি সিসি হিসাবে স্থানান্তর পূর্বক সমন্বয় করে আত্মসাত করেন। একইভাবে গত ১৩/০১/২০২২ খ্রি: তারিখ শাখার বিভিন্ন আমানতের উপর সুদের খাত-১৩৩/৩৭ ডেবিট করে ৪০,৬২,৫০০/- টাকা বিকাশ চাকমা এর নামে পরিচালিত সঞ্চয়ী হিসাব নং-৭৭৭০ এ স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে গত ২০/০১/২০২২খ্রি: তারিখ উক্ত সঞ্চয়ী হিসাব হতে উক্ত টাকা ডেবিট করে ৪টি সিসি ঋণ হিসাব স্থানান্তর পূর্বক সমন্বয় করত: আত্মসাৎ করেন।

এভাবে আসামী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দীঘিনালা শাখার সাবেক ব্যাবস্থাপক ও বর্তমানে খাগড়াছড়ি শাখার মূখ্য কর্মকর্তা নিকোলাস চাকমা(৩৭) এর বিরুদ্ধে গত ২৯/০৪/২০১৫খ্রি: তারিখ হতে ১৬/১১/২০২১খ্রি: তারিখ পর্যন্ত সময়ে সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, খাগড়াছড়ি শাখায় কর্মরত থাকাকালীন অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক সর্বমোট ১,৩৯,০৩,০১৪/-(এক কোটি ঊনচল্লিশ লক্ষ তিন হাজার চৌদ্দ) টাকা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহারে মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। 

নিকোলাস চাকমা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার হেডম্যানপাড়ার মৃত মৃত সুজিত চাকমা ও মৃত পিরনা চাকমার সন্তান। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুরস্থ নোয়াপাড়ার বাসিন্দা।

উল্লেখ্য, এর আগেও দুই কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৩২৩ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে চলতি বছরের ২৩ মে মঙ্গলবার দুদকের সহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ হোসেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাঙামাটিতে নিকোলাস চাকমার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায়  মামলা দায়ের করেন। তিনি নিকোলাস চাকমা কৃষি ব্যাংকের খাগড়াছড়ির দীঘিনালা শাখায় ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দায়িত্ব থাকা অবস্থায় ভুয়া ঋণ হিসাব খোলেন তিনি। সুদ ব্যয়ের খাতের বিভিন্ন উপখাত ডেবিট দেখিয়ে দুটি সিসি ও একটি সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন ব্যাংকের আমানত।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ওই শাখার আমানতের ওপর সুদ ব্যয়ের খাতের (১৩৩/৩৭) বিভিন্ন উপখাত ডেবিট করে এক কোটি ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ১০১ টাকা দুটি সিসি ও একটি সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন। পরে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল বিধিবহির্ভূতভাবে দুটি ভুয়া পার্সোনাল ঋণ হিসাব খুলে ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সিসি হিসাব নম্বর ১১৫-এর মাধ্যমে এবং একটি ভুয়া সিসি হিসাব খুলে ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ২২২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে সব মিলিয়ে তিনি দুই কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৩২৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরে তাকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।

জানা গেছে, তৎকালীন সময়ে আসামির বিরুদ্ধে দীঘিনালা থানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে সেটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে সেসময় মামলা করে সংস্থাটি।

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]