খাগড়াছড়িতে রোহিঙ্গা ইস্যুকে ঘিরে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার

২০১৭ সালে নিজ দেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক বর্বর নির্যাতনের স্বীকার হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে শুরু থেকেই একটি মহল নানা ষড়যন্ত্র রচনা করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে সরকারের নানা চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও স্বার্থান্বেষী ওই মহলটি রোহিঙ্গাদের ঘিরে এক সক্রিয় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে, যা এ অঞ্চলের পরিবেশ অশান্ত করে তুলতে পারে। 

এসব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই সরকার বহু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে আশ্রয় দিয়েছে। বাকি যারা কক্সবাজরের উখিয়া, টেকনাফ সহ নানা ক্যাম্পে অবস্থান করছে তাদের নিরাপত্তা অবাদ যাতায়াত ঠেকাতে ক্যাম্পের চারপাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মান করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের পাশাপাশি সেখানে কাজ করছে র‌্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা। 

রোহিঙ্গাদের অবাধ যাতায়াত ঠেকানো ও এক জায়গায় রাখতে নিয়মিত চল্লাশি ও নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। সরকারের নানামুখী অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে অদ্যাবদি রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। 

এবার এ রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন এক রাজনীতি শুরু করে এখানকার আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলো ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। আর এ রাজনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দাঁড় করানো হয়েছে কাঠগড়ায়। 

পাহাড়ে সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যা অপপ্রচার নতুন কিছু নয়। সত্যটা আমরা সবাই জানি। শুরু থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সরকারী নির্দেশ পালন করতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনাবাহিনীর বহু সদস্য প্রাণ দিয়েছেন এই পাহাড়ের বুকে। কিন্তু এই দেশ প্রেমিক, সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে দেশ বিদেশে খ্যাতি অর্জন করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে। আঞ্চলিক পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে সেনা বিরোধী অপপ্রচার করছে প্রতিনিয়ত। নামে-বেনামে বিভিন্ন মাধ্যম ও নিজেদের পরিচালিত ওয়েব পোর্টালে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা কন্টেন্ট তৈরী করে ছড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। Hill Voice, CHT News, আদিবাসীর সংবাদ, ইত্যাদি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী বিরোধী ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী মিছিল-স্লোগান যেন তাদের নিত্য দিনের কাজ।

অনুসন্ধান বলছে, দীর্ঘদিন যাবৎ প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ইউপিডিএফ কর্তৃক খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকা, গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গম এলাকা ও খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মহালছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা থেকে জোর পূর্বক পাহাড়িদের নিয়ে এসে রাতারাতি সেখানে অস্থায়ী মাচাং ঘর তৈরী করে বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকজনের রেকর্ডীয় ভুমি দখল করে নিচ্ছে প্রতিনিয়িত। এছাড়া সাবেক মহকুমা ও বর্তমান রামগড় উপজেলার তৈছাগাড়া, সোনাইআগা, মরাকয়লা, বাটনাশিবির এলাকায়ও অব্যাহত রয়েছে এ কার্যক্রম। এতে করে বাঙালিরা দিন দিন তাদের ভূমি হারাচ্ছে। 

সম্প্রতি, রামগড় ও মহালছড়িতে এসব ভূমি বেদখল নিয়ে মানববন্ধন এবং স্বারকলিপি প্রদানের পর বিষয়গুলো নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে লেখালেখির ফরে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। উপজাতি এসব সন্ত্রাসীদের ভূমি বেদখলের চিত্র এখন সবার চোখের সামনে। 

মূলত, এসব ভূমি বেদখল নিয়ে প্রশাসন যখন হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে এবং সরকারের উধ্বতন মহল যখন বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে তখনই নতুন করে পাহাড়ে রোহিঙ্গা পূনর্বাসনের ইস্যু তৈরী করে সরকারের তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাতে এবং পরিস্থিতির মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে সম্প্রতি নতুন রোহিঙ্গা নাটক সৃষ্টি করেছে প্রসীত বাহিনী। 

যার ধারাবাহিকতায়, খাগড়াছড়ির বিজিতলা ও গামারিঢালায় ভূয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসন করা হচ্ছে দাবি করে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের নামে ফের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করে তুলতে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। 

কক্সবাজারে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে যখন সরকার নানা প্রচেষ্টায় কাটাতারের বেড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছে এবং তাদের অবাদ যাতায়াত ঠেকাতে নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে ঠিক তখন কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গত ২৯ আগষ্ট মহালছড়ির দুর্গম এলাকায় ও খাগড়াছড়িতে, ১ সেপ্টেম্বর রামগড়, পানছড়ি ও দীঘিনালার দুর্গম এলাকাগুলোতে দলীয় নেতা-কর্মী ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জড়ো করে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড দিয়ে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অপপ্রচারের হাতিয়ার সিএইচটি নিউজে প্রচার করে ইউপিডিএফ। 

পাহাড়ি নেতারা বলছেন, কিছু সংখ্যক গণবিচ্ছিন্ন উপজাতি নেতা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য শান্তিপূর্ণ পার্বত্যাঞ্চলে ষড়যন্ত্রের জাল ছড়িয়ে অশান্ত করে রেখেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়মিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করতে এবং পাহাড়ের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপকহারে জনসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু লক্ষ্যনীয় ও উদ্বেবেগের বিষয় হলো সেনাবাহিনীর এসব অপারেশন বা সার্বিক কার্যক্রমকে কখনোই ভালো চোখে দেখেনি পাহাড়ি সংগঠনগুলো। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা তাদের মৌলিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে মূল বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা। 

পার্বত্য অঞ্চলের সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসংখ্য কিয়াংঘর তৈরি করেছে এবং তার সুরক্ষায় সর্বাত্মকভাবে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেছে। পক্ষান্তরে আমাদের ঠিক পার্শ্ববর্তী দেশের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী সেনাবাহিনী জাতিগত নিধন চালিয়ে নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে হাজার হাজার নিরীহ মুসলমানকে জীবন্ত পুড়িয়ে, জবাই করে, গুলি করে হত্যা করেছে। সেই সাথে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে অসংখ্য মসজিদ। তাদের নির্মমতার শিকার হয়ে প্রায় ১২ লক্ষাধিক অসহায় মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের দেখভাল করা, চিকিৎসা সেবা প্রদান, খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতেও আমাদের এই দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি সেদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নসহ সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্যও উপাসনালয় তৈরি করে দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে। সেনাবাহিনী দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম, নির্ঘুম রাত্রিযাপন, সাপের কামড় আর ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও মাসের পর মাস মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, প্রিয়জনদেরকে ছেড়ে দুর্গম পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের অন্বেষায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছে। অথচ তাদেরকেই কি-না সেখানে অপপ্রচারের বলি বানানো হচ্ছে।