মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ৫ ১৪৩০
|| ০৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২০
ছবি- নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন। আজ ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে পর্যন্ত বান্দরবান শহর মুক্ত মঞ্চের সামনে বান্দরবানের ম্রো সম্প্রদায় একটি মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে ম্রো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমে বান্দরবান পার্বত্য জেলা যখন অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নের দ্বার প্রান্তে উপনীত, তখনই কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রি মহল এই উন্নয়নধারাকে নষ্ট করার জন্য হীন প্রচেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে আর এন্ড আর হোল্ডিং গ্রুপ এর মাধ্যমে বান্দরবানের জীবন নগর চন্দ্রপাহাড়ে আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা ম্রো সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি করার জন্য নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলেন, ম্রো সম্প্রদায়ের কোন সদস্য এই মিথ্যা অপপ্রচারের সাথে জড়িত নয়।
ম্রো সম্প্রদায় নেতারা বলেন, স্বাধীনতার পর পার্বত্য এলাকায় সমস্ত ম্রো সম্প্রদায় সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই অঞ্চলে শান্তির জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করছে। ফলে সেনাবাহিনীর সাথে ম্রো'দের ভাল সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ম্রো সম্প্রদায়ের আত্মসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী ম্রো ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার সুবিধার্থে স্কুল ও হোস্টেল তৈরী করেছে, লেখা পড়ার জন্য শিক্ষা উপকরন প্রদান করছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য ম্রো যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। অসহায়, দুঃসহ ম্রো জনগনের জন্য ঘর-বাড়ী তৈরী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচুর পরিমাণে ম্রো সদস্যকে আনসার বাহিনীতে চাকুরী প্রদান করা হয়েছে। ম্রো ছেলে-মেয়েদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী প্রদান করছে। ম্রো যুবকদেরকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে চাকুরী ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অসহায় গরীব ম্রো সদস্যদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক গবাদি পশু, আর্থিক সহায়তা, কৃষি কাজে উপকরন হিসেবে বীজ, সার ইত্যাদি প্রদান করছে। অসহায় গরীব ম্রো ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সেনাবাহিনী বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান করছে।
ম্রো সম্প্রদায় উক্ত বিষয়টিকে বাংলাদেশের জনগনের সামনে আরো পরিস্কার করতে গিয়ে বলেন, বান্দরবান পাবর্ত্য এলাকায় সেনাবাহিনী ও সর্বস্তরের মানুষ যখন মিলেমিশে কাজ করে ঠিক তখন কিছু অসৎ স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের সুবিধা আদায়ের লক্ষে বান্দরবানে এই উন্নয়নের ধারাকে বিঘণ করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা ম্রোদের জড়িয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা, অপপ্রচার করে আসছে। স্বার্থন্বেষী মহল বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে চিম্বুক পাহাড়ে অবস্থিত জীবন নগর চন্দ্রপাহাড়ে পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক জীবন নগর চন্দ্রপাহাড়ে নাকি ৮০০-১০০০ একর জায়গা দখল করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রকৃত পক্ষে উক্ত জায়গাটির পরিমাণ মাত্র ২০ একর এবং ইহা একটি তৃতীয় শ্রেণীর জায়গা যা বসবাসের অযোগ্য। এই জায়গাটি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ২০১৫ সালে নিজে স্বাক্ষর করে কাজ প্রদান করেন। এই নির্মাণর ও বসবাসের অযোগ্য জায়গায় আর এন্ড আর গ্রুপ ও সেনাবাহিনী যৌথ উদ্যোগে উন্নতমানের পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য কাজ করছে। এই খবরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিডিয়াতে যে দশ হাজার লোকের ভূমিহীন হওয়ার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বর্তমানে উক্ত জায়গাটিতে কোন রাস্তা ঘাট, বিদ্যুৎ সংযোগ তথা কোন নাগরিক সুযোগ সুবিধা নেই। উক্ত এলাকাতে বর্তমানে কোন লোক বসবাসও করছে না। ঐ এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে পরিবেশের উপর কোন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নাই বরং ম্রো সম্প্রদায়ের আরো নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ম্রো সম্প্রদায় আরো বলেন, আমরা গতকালকেই (১৬ নভেম্বর) দেখলাম ৬২ জন বুদ্ধিজীবি এই ইস্যুটি নিয়ে বলেছেন যে, বিপুল সংখ্যক লোকজন নাকি ভূমিহীন হয়ে যাবে। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তাঁদের বান্দরবান সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। এখানে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে। যার সাথে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিগন ও সুর মিলাচ্ছে। আমরা সেই ৬২ জন শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবিকে বিনীত অনুরোধ করছি, তারা যেন এই এলাকার মানুষের বাস্তব চিত্র দেখার জন্য এলাকাটি এসে ঘুরে যান। ম্রো সম্প্রদায় বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক পর্যটন কেন্দ্র তৈরী সংত্রুামত যে, কাল্পনিক তথ্য ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অনতিবিলম্বে এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান, ম্রো নেতা মাকং ম্রো, আলং ম্রো, মেনরাং ম্রো, সাংরাং ম্রো, জীবন ত্রিপুরা প্রমুখ।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়