বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৭ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২ মে ২০২০
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট অপরাধের শেষ নেই। খুন-ধর্ষণ-হত্যা। বলে শেষ করা যাবে না। ১৯৭১ এ ছিলেন দেশের বিরোধিতায়। ২ মে জামায়াত নেতা সাঈদী মুক্তি পাচ্ছেন-কুচক্র মহলের এমন গুজবে আবারো সামনে চলে এসেছে তার নানান অপরাধগুলো। একাত্তরের অপরাধ ঢেকে নতুন পরিচিতি পেতে তিনি দাখিল পাসের সনদপত্র জালিয়াতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত উপ-কমিটি। তদন্তকালে ওই উপ-কমিটি খুঁজে পেয়েছেন আরও কয়েক ধাপে নাম পাল্টানোর আরও ঘটনাও। কেননা, মাত্র ১০ বছরে পাস করা কথিত দাখিল পাসের সনদপত্রে তার নাম দেখানো হয় মোস্তফা দেলাওয়ার হোসাইন। আলিমের সনদপত্রেই সেটা হয়ে যায় আবু নাঈম মো. দেলাওয়ার হোসাইন। আর জালিয়াতি করে জন্ম তারিখের পাশাপাশি এসব নামকেও পাল্টে করা হয় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
রাজাকার কমান্ডার
বর্তমানে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার তৎকালীন ইন্দুরকানীর (বর্তমানে জিয়ানগর উপজেলা) সাউথখালী গ্রামে ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ইউসুফ আলী শিকদার। তার প্রকৃত নাম দেলোয়ার হোসেন শিকদার। তাকে ‘দেইল্লা’ নামে সকলে চিনতেন।
জামায়াতের ছাত্র রাজনীতি করার কারণে সাঈদী শর্ষিনা মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে বারইপাড়া মাদ্রাসা থেকে তৃতীয় বিভাগে আলিম পাস করেন। এরপর উচ্চতর ডিগ্রি না নিলেও নামের সঙ্গে আল্লামা টাইটেল ব্যবহার করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের আগে শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন সাঈদী। সংসার চালানোর জন্য পারেরহাটে তার একটি ছোট মুদি দোকান থাকলেও তিনি মূলত তাবিজ বিক্রি করতেন।
অভিযোগ করা হয়েছে, সাঈদী ছিলেন আরবি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী এবং বাকপটু। এটাকে ব্যবহার করে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তিনি সখ্য এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেন। এ কারণে তিনি রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হতে সক্ষম হন। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পরই তিনি ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্যও। তার নেতৃত্বে এবং তার সহযোগিতায় পিরোজপুরের পারেরহাট বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে।
ধর্ষণ
অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধকালে পারেরহাট বন্দরের বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়মিত যৌন নির্যাতন করতেন। বিপদ সাহার বাড়িতেই আটকে রেখে অন্যান্য রাজাকারসহ সাঈদী ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। এক সময় ভানু সাহা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে একদল রাজাকার পিরোজপুরের হুগলাবুনিয়া গ্রামে হানা দেয়। রাজাকারদের আগমন দেখে গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু নারী পালিয়ে যান। কিন্তু মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তখন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তাকে ধর্ষণ করেন। এর ফলে স্বাধীনতার পর তিনি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এ নিয়ে গ্রামে বিভিন্ন কথা ওঠায় শেফালী ঘরামী দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন।
ধর্মান্তর
সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যতন চালাতো। তাদের বাড়ি-ঘর লুট করাসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত। পরে লোকজন সর্বস্ব হারিয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। আর যারা যেতে পারেননি, তাদের সাঈদী ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করেন। তাদের নিয়ে তিনি মসজিদে নামাজ পড়তেন। তাদের মুসলমান নামও দেন তিনি।
অভিযোগ করা হয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে সাঈদী প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ জন হিন্দুকে এভাবে ইসলাম ধর্মে রূপান্তর করেন। তাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হতো।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়