মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ৫ ১৪৩০
|| ০৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২০
আফগানিস্তানের অনুকরণে সম্প্রতি বাংলাদেশেও ভাস্কর্য ভাঙার দাবি তুলেছে কওমি বা দেওবন্দি হিসেবে পরিচিতদের একটি অংশ। তারা সকল ভাস্কর্যের বিরোধী নাকি শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেই তাদের আপত্তি তা অবশ্য তারা সুস্পষ্টভাবে বলেননি।
মাসিক আল কাউসার ও জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুটি লেখাকে ভিত্তি করে মাওলানা মামুনুল হক সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফতোয়া’ প্রকাশ করেছেন। ‘খোদ বাংলা ভাষার গ্রহণযোগ্য প্রতিটি ডিকশনারি’ এর সূত্র দিয়ে তিনি আরবি ভাষাকেন্দ্রিক ইস্যুতে ‘ফতোয়া’ দিয়েছেন।
তার লেখায় ‘ভাস্কর্য ও মূর্তি এক ও অভিন্ন’ উল্লেখের পাশাপাশি পাকা কবর ও ক্যান্টনমেন্টে স্থাপিত শিখা অনির্বাণকেও ইসলাম বিরোধী বলা হয়েছে। মূর্তি হলে কি ভাঙতে হবে?
হাইকোর্টের জাস্টিসিয়া ভাস্কর্য অপসারণের দাবি ওঠার পর আমরা অনেকেই বলেছিলাম যে তাদের দাবি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় এবার সফল হলে পরবর্তীতে সকল ভাস্কর্য ও কবর ভাঙার দাবি তোলা হবে। বাংলাদেশ যে আফগানিস্তানের দিকে যাচ্ছে তা সকলে টের পান কিনা ঠিক জানি না!
কোরআনের কোথাও ছবি আঁকা বা ভাস্কর্য তৈরিকে নিষিদ্ধ বলা হয়নি। মূর্তি বা যেসব জড়বস্তুকে উপাসনা করা হয় তাকে আরবিতে বলা হয় ওয়াসান বা সানাম (বহুবচনে আওসান বা আসনাম)। এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে মাবুদ, আল মাবুদ, সুরা, তাগুয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে ভাস্কর্যকে বলা হয় তামাসিল/তিমসাল/তামসাল যার ইংরেজি হচ্ছে মেমোরিয়াল, মনুমেন্ট বা স্ট্যাচু। মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্য উপাসনার কারণে। অন্যদিকে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে তাসবীরকে।
কোরআনে সুরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
‘তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী উপাসনালয় ও দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।….”
ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ ছিল না তার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবু বকর (রাঃ) এর শাসনামলে আমর বিন আসের মিশর অভিযানে ফারাও ও স্ফিংস ভাস্কর্য অক্ষত ছিল। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের ইরাকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সময়ও কোনো মূর্তি ভাঙ্গা হয়নি।
প্রকৃতপক্ষে, ভাস্কর্য সম্পর্কিত অবৈজ্ঞানিক ও অলস মস্তিষ্কপ্রসূত বক্তব্য চর্চা করতে গেলে পুরো পৃথিবীকেই ধ্বংস করতে হবে। কারণ ইতিহাস চর্চা করলে দেখা যাবে, মানুষ এক সময় নভোমণ্ডলের দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান প্রায় সব প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট অতিপ্রাকৃতিক বস্তুকে সৃষ্টিকর্তা মনে করে পূজা করেছে। মানুষ আবার পূজায় ফিরে যাবে ওই আশঙ্কায় ওই সব পূজনীয় বস্তুর সব ধ্বংস করা কি আদৌ সম্ভব?
প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে হজরত মোহাম্মদ (সা.) কাবাঘরের মূর্তি অপসারণ করলেন কেন? মনে রাখতে হবে, কাবাঘরে কোনও ভাস্কর্য ছিল না। ছিল মূর্তিপূজার উপাস্য বা প্রতিমা। আর ইসলাম প্রতিমার ওই সৃষ্টিকর্তা হওয়ার দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে বলেই হজরত মোহাম্মদ (সা.) তা কাবাঘর থেকে অপসারণ করেছিলেন। অবশ্যই কাবাঘর ছাড়া অন্য কোনও জায়গা থেকে হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতিমা অপসারণের নির্দেশ দেননি বা অপসারণ করেননি। শুধু কাবাঘর থেকে প্রতিমা অপসারণ করেছিলেন। কারণ কাবাঘর ছিল ইসলাম ধর্মের প্রার্থনাস্থল বা মসজিদ। তাই কোনও অজুহাত তুলে অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রার্থনাস্থল বা মন্দির দখল অথবা ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়টি ইসলাম অনুমোদন করে না।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়