বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য: কী ভয়ানক দম্ভোক্তি!
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০
ছবি- সংগৃহীত।
ভাস্কর্য ইতিহাসের উপস্থাপন মাত্র, ধর্মীয় কোনো আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। তাহলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা কি ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণে, নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত? কারণ যাই হোক, তা অগ্রহণযোগ্য এবং সমাজের জন্য বিপদজনক।
বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এ স্বাধীনতার মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রায় ২৩ বছর তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য আপসহীনভাবে লড়াই সংগ্রাম করেছেন। দীর্ঘ ১৩ বছর কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন কিন্তু বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপস করেননি। অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতার মোহ কিংবা ফাঁসির রজ্জু কোনো কিছুই বাঙালির অধিকারের চাইতে তার কাছে বড় ছিল না।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতিটি বাঁকে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করে তিনি বাঙালির মুক্তির প্রকৃত পথটি দেখিয়েছিলেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে একটি ছাতার নিচে সম্মিলিত করেছিলেন। বাঙালি জাতির প্রতিটি সদস্য তার আপনজন যেন পরিবারেরই সদস্য। সে কারণে তিনি হাসতে হাসতে ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়াতেও কুণ্ঠিত ছিলেন না। দাবি ছিল শুধু একটাই- ‘মরার পরে আমার মৃতদেহটা আমার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও’।
বাঙালির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে দেশব্যাপী। করোনা সংক্রমণের কারণে আনুষ্ঠানিকতা সীমিত হলেও মানুষের হৃদয়ের গভীরতা আর উষ্ণতায় তা ঠিকই পালিত হচ্ছে সাড়ম্বরে। কিন্তু হঠাৎ বিস্মিত হয়ে থমকে দাঁড়াতে হলো। ঢাকায় একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রকাশ্যে সভা করে জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জাতির জনকের একটি ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে। এমনকি এ কথাও বলে যে, ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে তা ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে। কী ভয়ানক দম্ভোক্তি।
স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতিকে হেয়-অপমান করার এ ধরনের দুঃসাহসে স্তম্ভিত সবাই। এ শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয় বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। বাঙালি জাতিসত্তা এবং হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা।
আমরা সবাই জানি ভাস্কর্য একটি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। হাজার বছরের লড়াই-সংগ্রামের বীরত্বগাঁথা এবং শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অবদানকে নতুন প্রজন্মের পরম্পরায় জীবন্ত করে রাখা। এই ভাস্কর্য নির্মাণের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক বা বিরোধ নেই। হাজার বছরের মুসলিম সভ্যতার দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখব ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে ইসলামি সংস্কৃতির নানা উপস্থাপনের মধ্যে ভাস্কর্য অন্যতম প্রধান হিসেবে স্থান করে আছে। যারা ভাস্কর্যকে ইসলামবিরোধী বলে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন- তারা কি অপরাপর ইসলামিক দেশগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছেন?
ইসলামের বীরত্বগাথা এবং বিভিন্ন অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে শত শত বছর ধরে। পাঠকদের উপলব্ধির জন্য তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরছি-
সৌদি আরব
মরু প্রধান সৌদি আরবে উট এবং ঘোড়ার প্রচলন তাদের প্রাত্যহিক জীবনেরই অংশ। সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে উট এবং ঘোড়ার ভাস্কর্য রয়েছে। জেদ্দা নগরীতে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, মানুষের চোখ, মরুর বুকে উটের ভাস্কর্য রয়েছে।
ইরান
ইরানের বিভিন্ন শহরে অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। তেহরানে মহাকবি ফেরদৌসের ভাস্কর্য, ইরানের হামাদানে ইবনেসিনার ভাস্কর্য, তেহরানে ওমর খৈয়াম, কবি হাফিজের ভাস্কর্য, খোরাসানে নাদির শাহের ভাস্কর্য রয়েছে। ইরানে রয়েছে ‘আজাদি’ নামের একটি বিশাল স্বাধীনতা স্তম্ভ, যার ডিজাইনার হোসেন আমানত। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মূল নেতা আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি ওরফে ইমাম খোমেনীর ভাস্কর্য এবং ম্যুরাল রয়েছে ইরানের বিভিন্ন শহরে।
সিরিয়া
মুসলিম রাষ্ট্র সিরিয়াতে রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। প্রয়াত শাসক হাফিজ আল আসাদের ভাস্কর্য রয়েছে বিভিন্ন শহরে। দামেস্ক নগরীতে রয়েছে মুসলিম সেনাপতি সালাদিনের স্মৃতি রক্ষায় ‘স্ট্যাচু অফ সালাদি’ নামের ভাস্কর্য।
মালয়েশিয়া
মুসলিম রাষ্ট্র মালয়েশিয়ায় নির্মিত হয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। কুয়ালালামপুরে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১৫ মিটার উচুঁ ন্যাশনাল মনুমেন্ট। প্রতিকীভাবে সাতজন বীরের প্রতিকৃতির মাধ্যমে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। মালয়েশিয়ায় আরো রয়েছে মুরুগান মূর্তি, মার্জার মূর্তি এবং কনফুসিয়াসের মূর্তি।
পাকিস্তান
ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। লাহোরে বাদশাহী মসজিদের সামনে মেরি মাতার ভাস্কর্য, পাঞ্জাবের জং শহরে ঘোড় সওয়ারের ভাস্কর্য, লাহোরে ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টসের সামনে অনেক ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়াও পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভাস্কর্য রয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে।
আমি মাত্র কয়েকটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে নির্মিত ভাস্কর্যের কথা এখানে তুলে ধরলাম। অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, মরক্কো, আলজেরিয়া, লিবিয়াসহ প্রায় সব দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে এমনকি যে রাষ্ট্রগুলোর সংবিধান কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছে- সেখানে ভাস্কর্য নির্মাণ যদি ধর্মবিরোধী না হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের দেশে এ প্রচারণা কেন?
ভাস্কর্য ইতিহাসের উপস্থাপন মাত্র; ধর্মীয় কোনো আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। তাহলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা কি ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণে, নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত? কারণ যাই হোক না কেন, তা অগ্রহণযোগ্য এবং সমাজের জন্য বিপদজনক।
ধর্মের অপব্যখ্যা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে প্রকৃত আলেম এবং সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। সব ধর্মই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক বোধের কথা বলে। সুতরাং ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায় তাদের মুখোশ উন্মোচন করতেই হবে। আর যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা প্রদান বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয় তবে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে তা মোকাবেলা করাই হবে বাঞ্ছনীয়।
লেখক: গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
- বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে
- জিএসপি বাড়তি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চান প্রধানমন্ত্রী
- সিরিজ জয়ে শান্তদের অভিনন্দন জানালেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী
- রোহিঙ্গাদের জন্য ইউএনডিপি’র বড় তহবিল গঠনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
- বাংলাদেশে প্রথম দফায় ১৭ শ’ টন পেঁয়াজ পাঠানোর প্রস্তুতি ভারতের
- রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের লিডারসহ ২০ সদস্য আটক
- রমজানে জাল নোট প্রতিরোধে বিশেষ নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
- মাটিরাঙ্গায় ৪৫ বস্তা চিনি জব্দ, দুই চোরাকারবারি আটক
- মাটিরাঙায় ক্লু-লেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ
- মাটিরাঙ্গায় দেশীয় অস্ত্র ও ৩ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার এক
- মাটিরাঙ্গায় যত্রতত্র বর্জ্যের ভাগাড়, নজর নেই কারো
- বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী সহিংসতার পাঁচ বছর: দোষীদের বিচারের দাবী
- অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিল লক্ষ্মীছড়ি সেনা জোন
- দলীয় দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ
- সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হচ্ছে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে
- রিটার্নের প্রমাণপত্র না ঝুলালে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা
- বাড়ানো হচ্ছে না রেলের ভাড়া: রেলমন্ত্রী
- ঘাটতি কাটিয়ে উঠছে ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংক
- পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল উদ্বোধন অক্টোবরে
- অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়তে হবে- প্রধান বিচারপতি
- তিন দিনের সফরে ঢাকায় আয়ারল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী
- ঈদ সামনে রেখে চাঙ্গা অর্থনীতি, ব্যবসায়ীদের ব্যাপক প্রস্তুতি
- বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়
- প্রধানমন্ত্রী
গাজায় শিশুহত্যা চলছে, কোথায় বিশ্বমানবতা? - আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা আজ
- তিনদিনের সফরে ঢাকায় সুইডেনের রাজকন্যা
- হাসপাতালের জমির মাটি চুরি ঠিকাদারের
- শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিতে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
- সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সমান সুযোগ দুই দলেরই
- রেকর্ড ব্যবধানে পুতিনের নিরঙ্কুশ বিজয়
- এক শিশুর চিকিৎসায় লাখ টাকা সহায়তা দিল সেনাবাহিনী
- খাগড়াছড়িতে বিডি ক্লিনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান উদ্বোধন
- পাহাড়ে এই বৈষম্যের শেষ কোথায়?
- খা.ছড়িতে আন্তঃ একাডেমি টুর্নামেন্ট বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীত হচ্ছে
- রাঙ্গামাটিকে হারিয়ে প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা খাগড়াছড়ির
- জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপ: খাগড়াছড়ির টানা দ্বিতীয় জয়
- রামগড়ে সূর্যমুখী চাষে সম্ভাবনার হাতছানি
- রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে মার্চে যাত্রী পারাপার শুরু হবে
- জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপে লালমনিরহাটকে হারালো খাগড়াছড়ি
- ৯ জনকে নিয়োগ দেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়
- দীঘিনালায় অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ নেতা আটক
- দেশের সাত মহাসড়ক আসছে টোলের আওতায়
- বাঘাইছড়িতে প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফ কালেক্টর নিহত
- দীঘিনালায় কিশোরীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আটক ৩
- চালের বস্তায় লিখতে হবে মূল্য ও ধানের জাত
- কমবে ডিজেল-পেট্রোল-অকটেনের দাম!
- সম্প্রসারণ হচ্ছে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা
- রেংমিটচ্য ভাষার প্রাণ ফেরানোর লড়াইয়ে সেনাবাহিনী
- পার্বত্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেন জ্বরতী