শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পেছনে প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণকে কারণ মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে, গ্যাসলাইন লিকেজ থেকেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এসিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিস্ফোরণের কোনো আলামত পায়নি বিস্ফোরক অধিদফতর। ঘটনাস্থল তদন্ত করে গ্যাস লিকেজের কথাই বলছে ফায়ার সার্ভিস অধিদফতরও। মসজিদ কমিটির অভিযোগ, নয় মাস আগেই গ্যাসলাইনের লিকেজ মেরামতের জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও ৫০ হাজার টাকার জন্য কাজ করেনি তিতাস। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারণ যাই হোক, এটা অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা ও এক ধরনের হত্যাকান্ড।
বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, প্রতিটি বিস্ফোরণের পেছনে আলাদা কারণ থাকে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আমাদের অফিসার যারা গিয়েছিল, তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এটা গ্যাস লিকেজ থেকেই হয়েছে। মসজিদের যে এক্সটেনশন হয়েছিল, তার নিচেই গ্যাসের পাইপ ছিল। ফলে পাইপের ওপরে প্রেসার পড়ার কারণে লিকেজ হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করছি। তিনি বলেন, মানুষ যেটা বলেছিল এসি থেকে বিস্ফোরণ, তবে আমাদের বিস্ফোরক অফিসাররা এসি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসি থেকে বিস্ফোরণের কোনো আলামত পায়নি। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটে অসাবধানতার কারণে। তাই এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। শুক্রবার রাতে এশার নামাজ চলাকালে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৪০ জনেরও বেশি মুসল্লি দগ্ধ হন। দগ্ধরা একের পর এক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব নূর হাসান বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। গ্যাস লিকেজ এবং বিদ্যুতের বিষয় মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।
স্থানীয়দের বক্তব্য, গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকেই গ্যাস জমে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর মেম্বার বলেন, গ্যাস লাইন লিকেজ হওয়ার বিষয়টি টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা মেরামত করার জন্য তিতাসকে জানিয়েছিলাম। তখন তারা আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমরা টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি বলে আর মেরামত করা হয়নি। গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। আজ গ্যাসের পাইপ লাইন তুলে লিকেজ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হবে। আর দায়িত্বে কেউ অবহেলা করলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিতাস কর্তৃপক্ষ জানায়, কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আবদুল ওহাবের নেতৃত্বে এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মসজিদের নিচে গ্যাসের লাইন রয়েছে। আর সেই গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নির্মাণ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইকবাল হাবিব বলেন, পৃথিবীর সব সভ্য দেশে ভবনের বিদ্যুতায়ন, গ্যাস সংযোগ এবং অন্যান্য যান্ত্রিকায়নের পর প্রতিবছর কমপ্লাইন সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা থাকে। এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও প্রতিবছর এ ধরনের ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা আছে। এটা প্রকাশ্যে থাকতে হয়। যাতে ভবন ব্যবহারকারী এই সার্টিফিকেশন দেখে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিতে পারে। এটা অনেকটা ওষুধের মেয়াদ থাকার মতো। কিন্তু বাংলাদেশে বারবার বলার পর এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা করা হয় না, কর্তৃপক্ষ গা করে না।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়