দেবী : কালির দাগ নিয়ে রূপকথা পাঠ
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৯
হরে সম্প্রতি পরিবহন ধর্মঘটের বলি হয়েছে দুই শিশু। দুর্ঘটনায় মানুষ মরলেও চালকদের সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর দেওয়া যাবে না, আর ক্ষতিপূরণও পাঁচ লাখ টাকা তাঁরা দিতে পারবেন না। যেন তাঁরা মানুষ মারবেন বলেই ঠিক করে রেখেছেন। যেহেতু মানুষ মরবেই, তখন এই জেল-জরিমানা তাঁরা দিতে পারবেন না। এমন উদ্ভট আবদার আর অদ্ভুত সব উটকো বিপদ এই শহরে ওত পেতে থাকে দিন-রাত। রানুর সঙ্গে সর্বদা থাকা অশরীরী আত্মাটির মতোই, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার ছাড় নেই।
রানু হলো হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ উপন্যাসের এক চরিত্র। উপন্যাস থেকে সম্প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন অনম বিশ্বাস। তো দুদিন ধরে চলা ধর্মঘটে ব্যক্তিগত গাড়ি বের করলেও তাঁদের মুখে মাখিয়ে দেওয়া হয় পোড়া মবিল বা সোজা বাংলায় কালি। একটি কলেজপড়ুয়া মেয়ের সাদা জামাতেও কালি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। নৈরাজ্যের চূড়ান্ত উদাহরণ আর কী! এতে অন্য দেশবাসীর মতো আমার মনেও কালির দাগ পড়েছে। তো সেই দাগ নিয়েই আমি ‘দেবী’ দর্শনে যাই।
ছবির কাহিনী সংক্ষেপে এমন, রানু নামের একটি মেয়ে বিশ্বাস করে, তার সঙ্গে একজন অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা বসবাস করে। ঘটনাক্রমে সেই অশরীরী হলো হিন্দুদের রুকমিনী দেবী। তার প্রভাবে রানু অনেক ঘটনা আগেভাগে বলে দিতে পারে। এটা নিয়ে সংসারে জটিলতা তৈরি হয়। এক বছর আগে বিয়ে করা স্ত্রীর এমন অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে স্বামী আনিস চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং এর প্রতিকার খুঁজতে দ্বারস্থ হন ক্লিনিকাল সাইকিয়াট্রির শিক্ষক মিসির আলির। আনিস আবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকে, সেই বাড়ির মালিকের বড় মেয়ের নাম নীলু। মিসির আলি যখন দিন-রাত এক করে যুক্তিবিজ্ঞান দিয়ে রানুর রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা করছে, তখন নীলু এক ভয়ানক সম্পর্কে জড়িয়ে যায় অপরিচিত এক পুরুষের সঙ্গে। তার নাম সাবেত। সাবেত আসলে একজন অসুস্থ মানসিকতার খুনি, ইংরেজিতে যাকে বলে সিরিয়াল কিলার। তার পাল্লায় পড়ে জীবন বিপন্ন হয় নীলুর। তখন রানুর সান্নিধ্য ত্যাগ করে সেই রুকমিনী দেবী নিজের অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে হাজির হয় নীলুর কাছে। সাবেতকে ছবক শিখিয়ে সঙ্গী হয় নীলুর। দেবীর প্রস্থানের পর মারা যায় রানু। পরে নীলুর চেহারাও ধীরে ধীরে রানুর মতো হয়ে যেতে থাকে, মানে দেবী দেবী একটা ভাব চলে আসে। এই হচ্ছে কাহিনী।
এই দেবীই রানুকে একবার রক্ষা করেছিল বিষ্ণুমন্দিরের ভেতর। জালালউদ্দীন নামের এক লোক মন্দিরের ভেতর কিশোরী রানুর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। তখন তথাকথিত দেবী প্রবেশ করে রানুর শরীরে। ঘটনার তোড়ে আতঙ্কিত জালালউদ্দীন সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচে। উপন্যাসে আছে এই মন্দিরের বয়স বড়জোড় তিনশ বছর হবে। তখন পালবংশের লোকেরা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেবীকে তুষ্ট করার জন্য একটি বালিকা বলি দেওয়ার কথা। এখানে চলচ্চিত্রে অবশ্য বলা হয় আরো দুই বালিকাকে বলি দেওয়া হয়। যারা পরে দেবীর সঙ্গেই ঘোরাফেরা করে অতৃপ্ত আত্মা হয়ে। যেন দুই মেয়েকে নিয়ে এক মা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
চলচ্চিত্রে মন্দিরের প্রাচীনত্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সময় ভ্রমণ হয় তিনশ বছর আগে, মানে ফ্ল্যাশ ব্যাক, সালটি দেখানো হয় ১৭৫৭ সাল। উপমহাদেশের রাজনীতির জন্য এই সালটি বেশ গুরুত্ব বহন করে। দেখা যায় ওই বছর এক বালিকাকে বলি দেওয়ার সময় খোদ দেবী এসে জল্লাদের কল্লা নিয়ে নেয়। রক্ষা পায় সেই বালিকা। একইভাবে আধুনিককালে এসেও এই রুকমিনী দেবী রক্ষা করে রানুকে। পরে খুন হওয়া থেকে বাঁচায় নীলুকেও। এই তিনটি ঘটনা থেকে যা দাঁড়ায় তা হলো দেবী নারীর রক্ষাকর্তী হিসেবেই হাজির হয় সব সময়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই যে নারীর অসহায়ত্ব ও শক্তিমত্তার জায়গাটি চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটাকে সাধুবাদ জানাতে হয়। অবশ্য মৌলিক ভাবনাটি হুমায়ূন আহমেদেরই। লেখক নারীশক্তির উদ্বোধন করতে চেয়েছেন। বলতে চেয়েছেন নারীকে হয় তো বলি দেওয়া যায়, ধর্ষণ করা যায়, বিকৃত লালসার বস্তু বানানো যায়, কিন্তু এসব কিছুর ঊর্ধ্বে নারীর শক্তি, অনেকটা যেন ঐশ্বরিক। এই শক্তিকে পার্থিব যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। মিসির আলিও তা পারেনি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে হুমায়ূন তথা অনম কি তাহলে অন্ধ বিশ্বাসের প্রশংসা করলেন? বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের জবাবে আমি পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই, আরব্য রজনীর গল্পগুলো কি তাহলে জাদুবিদ্যার জয়জয়কার? শেক্সপিয়রের টেম্পেস্টও কি তাই? অথবা বাংলার ঠাকুরমার ঝুলি? নিদেনপক্ষে যদি বলি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’? যেখানে এই দেবী উপন্যাসের মতোই অপার্থিব দুনিয়ার সুগন্ধ আর নূপুরের নিক্বণ নিয়ে হাজির হয় আড়াইশ বছর আগের দুনিয়া থেকে গুলবাগের কোন ইরানি ক্রীতদাসী? এগুলো কি তাহলে কুসংস্কারের প্রচারক? নিশ্চয় নয়। কাজেই আমি বলতে চাই ‘দেবী’ আধুনিক রূপকথা। এর বক্তব্য তাই আমার কাছে রূপক আকারে ধরা দেয়, বলতে চায়, নারীকে হয় তো আপাতদৃষ্টিতে দুর্বল ও ভঙ্গুর বলে বোধ হচ্ছে এবং সেটার সুযোগ পুরুষরা নিচ্ছে, কিন্তু নির্বোধ পুরুষেরা জানেনা নারী বা মাতৃশক্তি কি জিনিস! কেমনই বা তার দুর্গতিনাশিনী রূপ! নারীর অন্তর্শক্তিকেই উদ্বোধন করা হয়েছে এই রূপকথায়।
কাহিনীতে বর্ণিত রুকমিনী দেবীর অস্তিত্ব রয়েছে পুরাণে। তদানুসারে রুকমিনী বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা ও শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী। রুকমিনীকে বলা হয় লক্ষ্মীর অবতার। সে জন্যই কি পরিচালক ছবিতে রানুর পাশে একটি লক্ষ্মীপেঁচাকে বসিয়ে রেখেছিলেন? যদি সেই কারণেই হয়, তাহলে বলতে হয় চমৎকার রূপকের ব্যবহার করেছেন পরিচালক। ছোট করে বলে রাখি, এই রুকমিনী দেবীও পুরুষতন্ত্র বা পিতৃতন্ত্রের শিকার হয়েছিল, কিন্তু যার প্রেমিক কৃষ্ণ তার আর চিন্তা কি? কৃষ্ণকেই বিয়ে করবে বলে মনস্থির করে ফেলেছিল রুকমিনী, কিন্তু রুকমিনীর বাবা-ভাই কৃষ্ণের সঙ্গে তার বিয়ে দিতে রাজি নয়। এমনকি তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ারও বন্দোবস্ত করে ফেলা হয়। দমে যাওয়ার পাত্র নয় কৃষ্ণ। রুকমিনীকে সে হরণ করল এবং হবু শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলো। লড়াইয়ে জয় পেল কৃষ্ণ। যথাবিধি বিয়ের পর রুকমিনী হয় কৃষ্ণের প্রধানা স্ত্রী। কৃষ্ণ ও রুকমিনীর সংসারে দশ ছেলে ও একটি মেয়ের জন্ম হয়। পুরাণ অনুযায়ী হাঁটলে ছবির পরিচালক জোড়া ভূত না দেখিয়ে একটি ভূত রাখলেও পারতেন।
যাই হোক, ছবি দেখে আরেকটি প্রশ্ন দর্শকের মনে উদয় হতে পারে, উপন্যাসে তো তিনশ বছরের পুরোনো মন্দিরের কথা বলা ছিল, কিন্তু চলচ্চিত্র পরিচালক কেন ১৭৫৭ সালটিকেই বেছে নিলেন? স্রেফ অষ্টাদশ শতাব্দী বলেও তো ছেড়ে দিতে পারতেন। আমার ধারণা পরিচালক রাজনৈতিক পরাধীনতার সঙ্গে নারীর পরাধীনতাকে মিলিয়ে দেখাতে চেয়েছেন। ওই বছর পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের হাতে পরাজিত হন। ইংরেজরা যেন পুরুষতন্ত্রের রূপক আর সিরাজউদ্দৌলা যেন পরাধীন নারীদের প্রতীক। সেই পরাধীনতা থেকে নারীদের মুক্তি দিতেই যেন গুমরে গুমরে মরছে এক মহাশক্তি, যে শক্তি সুযোগ পেলেই ক্ষোভে, ক্রোধে, উন্মত্ততায় ফেটে পড়ে আর জালালউদ্দীন ও সাবেতের মতো লোকদের বিনাশ করে দেয়।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
- ডিজিটাল জরিপকালে জমির মালিকদের জানাতে হবে- ভূমিমন্ত্রী
- সেই দুই ইউপি চেয়ারম্যান পদে থেকেই উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
- বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি করিডোরের জন্য কেনা হচ্ছে ১৩৭টি এসি বাস
- ঢাকার পয়ঃবর্জ্য ও গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ
- আমানতের মুনাফার ওপর কর দিতে হবে না
- বেনজীরের দুর্নীতি: দুই মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট
- ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন
- সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস কাতারের আমিরের
- কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই
- পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
- জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
- ব্যাংক ডাকাতি রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
- প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের সব উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষক: স্পিকার
- ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির, গেলেন নেপাল
- আজ ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী
- কাতারের আমিরকে আরও কর্মী নেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
- বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ চাইলেন রাষ্ট্রপতি
- খাগড়াছড়িতে ক্রিকেট লীগ ও ভলিবলের ফাইনাল অনুষ্ঠিত
- পানছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাকে ভোট দিবে আওয়ামী লীগ?
- খাগড়াছড়িতে ৩ উপজেলার ৬ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
- প্রথম ধাপের চার উপজেলার প্রার্থীরা পেলেন প্রতীক
- দীঘিনালা জোন কর্তৃক বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প পরিচালনা
- মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার নিয়ে গবেষণার আহ্বান
- গ্যাস খাতে বড় সংস্কার করবে পেট্রোবাংলা
- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে চায় কিরগিজস্তান
- নোয়াখালীর নতুন গ্যাস কূপে খনন কাজ শুরু
- বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৪.৮ কিমি এখন দৃশ্যমান
- ঢাকায় কাতারের আমির: অগ্রাধিকার পাচ্ছে বাণিজ্য,বিনিয়োগ ও ভূরাজনীতি
- সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক
- দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন
- ২৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
- বিলুপ্তির পথে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী
- লক্ষ্মীছড়িতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন চার প্রার্থী
- খাগড়াছড়িতে ক্রিকেট লীগ ও ভলিবলের ফাইনাল অনুষ্ঠিত
- দীঘিনালা জোন কর্তৃক বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প পরিচালনা
- চার বছরেও শেষ হয়নি দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মান
- লক্ষ্মীছড়িতে অসহায়দের মাঝে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা প্রদান
- পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
- বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএফ সদস্য নিহত
- পানছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাকে ভোট দিবে আওয়ামী লীগ?
- খাগড়াছড়িতে নাগরিক পরিষদের দায়িত্বে লোকমান-মাসুম
- নতুন করে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
- রেলস্টেশনে বসেছে ভেন্ডিং মেশিন, যাত্রীরাই কাটবে নিজের টিকিট
- কাতারের সাথে ৬ চুক্তি, ৫ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা
- রাজধানীর জনবহুল পয়েন্টে ৬ ঘণ্টা খাবার পানি সরবরাহ করবে ঢাকা ওয়াসা
- ঢাকা উত্তরের বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা পেলে জেল-জরিমানা
- বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী চীন
- খাগড়াছড়িতে তিন উপজেলায় মনোনয়ন জমা দিলেন ৩৬ প্রার্থী
- মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার নিয়ে গবেষণার আহ্বান
- দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন