শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২১
ঐতিহাসিকরা এই মামলা এবং মামলা থেকে সৃষ্ট গণ-আন্দোলনকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পেছনে প্রেরণাদানকারী অন্যতম প্রধান ঘটনা বলে গণ্য করে থাকেন। এমনি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঢাকা সেনানিবাসে মামলার ১৭ নম্বর আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুদ্ধ জনতা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনসহ বেশকিছু সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় অতিথি ভবনে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এস এ রহমান ও সরকার পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মঞ্জুর কাদের অবস্থান করতেন। তারা উভয়েই পালিয়ে যান এবং সেখানে মামলার কিছু নথিপত্র পুড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে এবং শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানসহ মামলায় অভিযুক্তদের এক গণসম্বর্ধনা দেয়া হয় এবং শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে বঙ্গবন্ধু মামলা প্রত্যাহারের পরও সরকারের রোষানলে ছিলেন অভিযুক্তরা পরেও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ভোরে মামলার দুই নম্বর আসামী নৌ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী । সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী সংসদেও ঘোষণা করেছিলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্রের ঘটনা পুরোপুরি সত্য ছিলো। তার ‘সত্য মামলা আগরতলা’ বইয়ের ভূমিকায় তিনি বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমরা যাঁরা মামলাটিতে অভিযুক্ত ছিলাম, ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি তাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। কারণ আমরা ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মতি নিয়ে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠন করেছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, একটি নির্দিষ্ট রাতে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা বাঙালিরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি ক্যান্টনমেন্টে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্র কেড়ে নেব, তাদের বন্দী করব এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করব।” শওকত তার বইতে আরো জানান, ১৯৬১ সাল থেকেই কতিপয় দেশ প্রেমিক বাঙালি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অফিসার বাংলাদেশকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন করার জন্য রীতিমত গোপন সংস্থা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিলো। ক্রমানুযায়ী সব আসামীর : শেখ মুজিবুর রহমান, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান, প্রাক্তন এলএস সুলতান উদ্দিন আহমেদ, এলসিডি নূর মোহাম্মদ, আহমেদ ফজলুর রহমান সিএসপি, ফ্লাইট সার্জেন্ট মাহফিজউল্লাহ, কর্পোলাল মোহাম্মদ আবদুস সামাদ, প্রাক্তন হাবিলদার দলিল উদ্দিন, রুহুল কুদ্দুস সিএসপি, ফ্লাইট সার্জেন্ট মোহাম্মদ. ফজলুল হক, ভূপতিভুষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী, বিধানকৃষ্ণ সেন, সুবেদার আবদুর রাজ্জাক, প্রাক্তন হাবিলদার ক্লার্ক মুজিবুর রহমান, ফ্লাইট সার্জেন্ট মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, সার্জেন্ট জহুরুল হক, লেফটেন্যান্ট এ জি মোহাম্মদ খুরশিদ, খান এম শামসুর রহমান সিএসপি, রিসালদার এ কে এম শামসুল হক, হাবিলদার আজিজুল হক, এসসি মাহফুজুল বারী, সার্জেন্ট শামসুল হক, মেজর শামসুল আলম, ক্যাপ্টেন মো. আবদুল মোতালেব, ক্যাপ্টেন এম শওকত আলী মিয়া, ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা এএমসি, ক্যাপ্টেন এএনএম নুরুজ্জামান, সার্জেন্ট আব্দুল জলিল, মোহাম্মদ মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী, ফাস্ট লে এম এস এস রহমান, সুবেদার এ কে এম তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী রেজা, ক্যাপ্টেন খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং ফাস্ট লেফটেন্যান্ট আব্দুর রউফ। সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে এবং শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়