• মঙ্গলবার ৩০ মে ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১৬ ১৪৩০

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৪

দৈনিক খাগড়াছড়ি

সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইউপিডিএফের সমঝোতা হাস্যকর!

দৈনিক খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২  

 খাগড়াছড়িতে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যদের একাধিক গোপন বৈঠক হয়েছে-এমন একটি খবর গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেকের ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ঘুরছে। যেখানে সমঝোতার কথা বলা হচ্ছে।
বস্তুত এই ধরণের খবরের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি দুই মহল থেকেই। আনুষ্ঠানিকভাবেও কেউ বৈঠকের কথা স্বীকার করেননি। এই সংক্রান্ত কোনো বিবৃতির কথা জানাতে পারেননি। খবরটি যে ভুয়া এবং খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালিদের সম্প্রীতিকে নষ্ট করার পাঁয়তারা তা প্রমাণিত হয়ে গেছে কোনো ধরণের সত্যতা না থাকার কারণে।
খাগড়াছড়ির সচেতন মহলের ধারণা, এই ধরণের কোনো বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা তারা কখনই দেখেননি। পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) পার্বত্য চট্টগ্রামে সবসময় শান্তি চুক্তির বিরোধীতা করে আসছে। কেবল তারাই নয়, তাদের মত আরও ৩টি দল মিলিয়ে মোট ৪টি উপজাতি সংঘাতে বিশ্বাসী দলগুলোর  সঙ্গে এই ধরণের বৈঠক হওয়ার সুযোগ নেই।
বলা হয়ে থাকে অস্ত্রের মাধ্যমেই পাহাড়ে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে ইউপিডিএফ। পাহাড়ে সশস্ত্র তৎপরতা আর একের পর এক প্রতিপক্ষ হত্যার মাধ্যমে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেই দলটি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। এর সঙ্গে রয়েছে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ। তবে দলটির নেতারা তা অস্বীকার করলেও বলা হয় মূলতঃ এসব কারণেই প্রতিষ্ঠার বিশ বছরের মাথায় ভাঙন তৈরি হয় ইউপিডিএফে। সশস্ত্র তৎপরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদে গঠিত হয় নতুন দল 'ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক'।
নতুন এই দলটির নেতা শ্যামল কান্তি চাকমাও অনেকবার  বলেছিলেন যে পার্টি সঠিক পথে চলছে না। এখানে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ এবং পার্টির মধ্যে সিন্ডিকেট হচ্ছে। জনগনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেটা দিয়ে অস্ত্র কেনা হচ্ছিলো। এসব কথা বলার কারণে দলের ভেতরেই কোন্দল এবং খুনের ঘটনা ঘটেছে।
অন্য নেতারাও জানিয়েছিলেন, একটি অংশ দলের গোপন কার্যক্রম ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে কয়েকজনকে হত্যাও করা হয়। ইউপিডিএফ যে সন্ত্রাসী দল সেটা বহুবার তাদের কর্মকান্ডে প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইউপিডিএফ ভেঙ্গে নতুন দল তৈরি হওয়ার পর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাহাড় হঠাৎ করেই খুনোখুনি বৃদ্ধি পায়। যার সূত্রপাত ইউপিডিএফ মূল দলের এক নেতার হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, গত দেড় বছরে পাহাড় সংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে ৬০ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
পাহাড়ের বিবাদমান আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি এখন নিয়মিত ঘটনা। আর এতে আতংকিত বাঙালিরাও। গত ২০ বছরে আঞ্চলিক দলগুলোর হানাহানিতে এক দিনে বা এক ঘটনায় এত বেশিসংখ্যক মানুষ নিহত হননি। এত দিন হানাহানির শিকার হয়েছেন মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। 
শক্তিমান চাকমার মতো একজন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেএসসের একসময়ের কেন্দ্রীয় নেতা খুন হলেন। তিনি জেএসএস থেকে ভেঙে হওয়া জেএসএসের (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহসভাপতিও ছিলেন। মারা গেছেন তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা। তিনি ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) প্রধান ছিলেন। দুটি ঘটনা সন্ত্রাসের ব্যাপকতাই নির্দেশ করে। পাহাড়ে খুনের ধারা এখন ঊর্ধ্বমুখী। নিজেরাই সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত। তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমঝোতা প্রশ্নই উঠে না।
এসব সংঘর্ষ মূলতঃ হয়েছে ইউপিডিএফ বনাম ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক ও এম এন লারমাপন্থী জনসংহতি সমিতির মধ্যে। বলা হয়, আদর্শিক কারণ নয়, মূলতঃ আধিপত্য বিস্তার, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয়ের পথ সুগম রাখতেই দলগুলোতে ভাঙন এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরণের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৈঠক হওয়ার খবরটি সম্ভব কি না। ছড়িয়ে দেওয়া ওই মিথ্যা খবরে বহুবার বলা হয়েছে, ইউপিডিএফ প্রসীত নেতারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে আপোষে যেতে রাজী হচ্ছেন না। শুধু তারাই কেবল পাহাড়ের শান্তি প্রতিষ্ঠায় গোপনে কাজ করে যাচ্ছে।
হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, বাকি দলগুলোর মধ্যে মগ পার্টি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), জেএসএস, বর্ম পার্টিসহ অন্য সংগঠনগুলোকে তারা সেনাবাহিনীর সমর্থিত দল বলে প্রচার করছে। তবে এসব দলের একটি জায়গায় দারুণ মিল। আর তা হচ্ছে, অস্ত্রের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করে পাহাড়বন্দী করে রাখতে চায় ওরা!
খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ এর পাশাপাশি জেএসএসও নানান সময়ে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এসব উগ্রবাদী সংগঠনের প্রতিটি দলই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে। প্রোপাগান্ডা চালায়। বস্তুত, এসব প্রোপাগান্ডার পেছনে লক্ষ্য একটাই তা হলো দেশের সার্বভৌম রক্ষার জন্য নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা। নেহায়েত অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়।     
 

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]