বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৭ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২৩
বঙ্গবন্ধু ও শেখ জামাল। ফাইল ফটো
ড. কাজী এরতেজা হাসান
শেখ জামাল এখন ঘুমিয়ে আছেন বনানী কবরস্থানে। তার পাশেই ঘুমিয়ে আছেন প্রাণপ্রিয় স্ত্রী রোজী জামাল, যার হাতের তাজা মেহেদির রং বুকের তাজা রক্তে একাকার হয়ে গিয়েছিল। শেখ জামালের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের অযুত ভালোবাসা, গর্ব ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পেশাগতভাবে দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গতিশীল নেতৃত্বের অধীনে এগিয়ে যাচ্ছে পেশাগত সমৃদ্ধির সোনালি দিগন্তে। সেনাবাহিনীই যাঁর ছিল নিয়তি, তিনি সেনাবাহিনীর এই মহৎ অর্জনগুলো দেখে কত না আনন্দিত হতেন। শান্তিতে ঘুমান শেখ জামাল। জেনে রাখবেন, আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মের সেনানীরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত দিতে সদা প্রস্তুত। আজকের এই দিনে একজন অকালপ্রয়াত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা, বন্ধু-অন্তঃপ্রাণ ও সাহসী তরুণের কথা স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধাভরে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত অফিসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৬৮তম জন্মদিন শুক্রবার। শেখ জামাল ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী এবং একজন ক্রীড়াবিদ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শেখ জামালও গৃহবন্দি ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে নেতৃত্ব দেন। শেখ জামাল ধানমন্ডি থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পথচলা শেষে ভারতের আগরতলা পৌঁছান এবং সেখানে মুজিব বাহিনীতে (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস, বিএলএফ) যোগদান করে প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন।
শেখ জামাল ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক চৌকস-মেধাবী সেনা অফিসার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লং কোর্স’র প্রথম ব্যাচের কমিশন অফিসার। ১৯৭৪ সালে শেখ জামাল যুগোস্লাভিয়ার মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ব্রিটেনের স্যান্ডহার্স্ট একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে ঢাকা সেনানিবাসস্থ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলে চাকরিকালে স্বল্প সময়েই অফিসার ও সৈনিকদের মাঝে তিনি অসাধারণ পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতার ছাপ রেখেছিলেন। কয়েক সপ্তাহেই শেখ জামাল অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে তাদেরই একজন হয়ে যান। ট্রেনিং গ্রাউন্ডে, রণকৌশলের ক্লাসে, অবস্টাকল ক্রসিংয়ে অংশ নিয়ে সৈনিকদের মুগ্ধ করেন। ব্যাটালিয়ন বক্সিং টিমের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ব্যাটালিয়ন ডিউটি অফিসার হিসেবে ক্যান্টনমেন্টে নিজ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই দিন রাতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফিরে আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাত্রিতে ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিহত হন শেখ জামাল।
শহীদ শেখ জামালের জন্মদিন যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বুধবার সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেঝ ছেলে শেখ জামালের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান ছিল ঘটনাবহুল। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাকি সদস্যদের মতই গৃহবন্দি ছিলেন। মধ্য আগস্টের একদিন সকালে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব দেখতে পান ছেলে ঘরে নেই। বেগম মুজিব তার সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তুললেন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে। সারা বিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের ছেলেকে গায়েব করেছে। গৃহবন্দি দশা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মুজিব বাহিনীর হয়ে ৫ নম্বর সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করলেও কোন এক কৌশলগত কারণে এ কথা চেপে রেখেছিল তৎকালীন প্রবাসী সরকার। শেখ জামাল অত্যন্ত চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন, মনের কথা মনেই রাখতেন সহজে বের করতেন না। তিনি অত্যন্ত পড়ুয়া প্রকৃতির ছিলেন, দিনের বেশিরভাগ সময়ই পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে পালিয়ে শেখ জামাল সরাসরি চলে গিয়েছিলেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে। তারপর ট্রেনিং শেষ করবার পর তাকে মুজিব বাহিনীতে নেওয়া হয়। সেখানেই যুদ্ধের বাকি সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন জামাল। কিন্তু জামালের এই খবরটা সঙ্গত কারণেই একেবারে চেপে যায় স্বাধীন বাঙলা প্রবাসী সরকার, কারণ এই ইস্যুতে প্রবাস সরকার এবং ভারত সরকারের তীব্র চাপে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচণ্ড বেকায়দায় পড়েছিল পাকিস্তান সরকার।
২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের যেসব আলোকচিত্র আসে তার একটিতে সীমান্তের ১০ মাইল ভেতরে একটি রণাঙ্গনে সাব মেশিনগানধারীদের একজন হিসেবে ছবি ওঠে জামালের। যুদ্ধশেষে সদ্য কমিশন পেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লংকোর্সের প্রথম ব্যাচের কমিশন অফিসার। পরিবারের সকলকেই সুখবরটি দিতে বাড়িতে এসেছিল। ১৪ আগস্ট রাতেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বেগম মুজিব নাকি স্নেহভরে তাকে বলেছিলেন, ‘আজ রাতটুকু থেকে ভোরে যাস।’ জামালের ক্যান্টনমেন্টে আর যাওয়া হয়নি। পরদিন রাত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ভয়াবহ হত্যা যজ্ঞের শিকার শেখ জামালসহ তার পরিবার। এভাবেই থেমে যায় এই টগবগে তরুণের আলো। হৃদয়ের গভীর থেকে এই মহান মানুষটির জন্য প্রাণভরে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করছি। আল্লাহ পাক যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করেন। আমিন।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিচালক, এফবিসিসিআই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়