• বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৩ ১৪৩০

  • || ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

দৈনিক খাগড়াছড়ি

শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেল বেদে পল্লীর মানুষগুলো

দৈনিক খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩  

পথে পথে সাপ ও বানরের খেলা দেখিয়ে যা আয় হত তা দিয়ে আমার ও আমার পরিবারের খাবার যোগাতাম। যেখানে যেতাম সেখানে বাঁশের কঞ্চি আর পলিথিনের তৈরি ছোট্ট একটি তাবুতে আশ্রয় নিতাম। ঝড় বৃষ্টিতে ভিজতাম। অনেক কষ্টের জীবন ছিল। এখন নিজেদের জমি আর পাকা ঘর হয়েছে। এখন আর ঘরের চিন্তা নেই। স্বামী সন্তানদের নিয়ে নিশ্চিন্তে বসবাস করছি। আমাদের একটি স্থায়ী ঘরের স্বপ্ন ছিল, আজ তা সত্যি হয়েছে। এভাবেই বলছিলেন বেদে পল্লীর এক গৃহবধু পুতুল। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর তাকে দেওয়া হয়। 

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সাবেক নির্বাহী অফিসার ও বর্তমান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিনের দীর্ঘদিনের স্বপ্নবাস্তবায়নে ও তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অবশেষে সফলতা পেতে শুরু করেছে কালীগঞ্জের “স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের” বেদে সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

সেসময় উপস্থিত ছিলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, স্থানীয় সরকারে উপ-পরিচালক মো: ইয়ারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজীবুল ইসলাম খান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান, কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হাবিবুল্লাহ ও বারবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ উপজেলা প্রশাসনের দপ্তর প্রধানরা।

স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে বেদে সম্প্রদায়ের বিধবা কাঞ্চন বিবি জানান, বাঁশের ফালি, কঞ্চি আর পলিথিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঘরে কেটে গেছে জীবনের ৫৫ বছর। স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ে ফুলমতিকে নিয়ে জীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে পথে পথে। বাড়ি বাড়ি হাতের কারসাজিতে খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে উপার্জিত সামান্য আয়ে মিটিয়েছে মা-মেয়ের পেটের ক্ষুধা। এমন অনিশ্চিত জীবনে স্থায়ী জমি আর ঘরের স্বপ্ন ছিল একেবারেই কল্পনাতীত। আমাকে দুই শতক জমির উপর নির্মিত দুইটি রুম, রান্না ঘর ও একটি টয়লেট দেওয়া হয়। এখন আমার জীবনে আর কোন দুঃখ নেই বলে যোগ করেন। 

বেদে পল্লির সরদার হাবিবুর রহমান জানান, আমাদের বেদে সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক পরিবার আছে ভূমিহীন। যে সব পরিবার তাদের সদস্যদের নিয়ে বনে বনে ঘুরে বেড়াই। সাপের খেলা, ম্যাজিক আর ভিক্ষার উপার্জনে যাদের সংসার চলে। বাঁশের ফালি, কঞ্চি আর পলিথিনের তাবুই তাদের ভরসা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এসব পরিবারের কষ্টের সীমা থাকে না। এরকম পরিবারের জন্য সরকার পাকা ঘর দিয়েছে। এখন এসব পরিবার স্থায়ী মাথা গুঁজার ঠাই পেয়ে খুশি।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন বলেন, বেদে সম্প্রদায় কালীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন কালীগঞ্জ বেদে সম্প্রদায়ের ৫৯ পরিবারকে চিহ্নিত করে। জলাধারের সঙ্গে তাদের যে জীবনযাপন ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পরিবেশ নির্ধারণ করা হয়। পিছিয়ে পড়া এ সম্প্রদায়ের সদস্যদের পুনর্বাসন সম্পন্ন হওয়ায় তাদের নতুন প্রজন্ম শিক্ষা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে একটি উন্নত প্রজন্ম গড়ে উঠবে বলে যোগ করেন। 

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে তুলে ধরেছেন। তারই অংশ হিসাবে সারা দেশের ভূমিহীন গৃহহীন মানুষকে নিশ্চিত ঠিকানা করে দিয়েছেন। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায়ের জন্য স্থায়ী বিশাল এ নিবাস জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব বলে তিনি জানান।

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]