হরতালের নামে সড়কে অগ্নিসংযোগ, ভীতি সৃষ্টির পাঁয়তারা ইউপিডিএফের

গত ১৫ মার্চ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালায় সেনা অভিযানে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসী নবায়ন চাকমা ওরফে মিলন চাকমাকে আটকের পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধহয়ে সেখানেই মারা যায় সশস্ত্র এ ভয়ংকর সন্ত্রাসী। এছাড়া একইদিন রাতে জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়িতে তাৎক্ষনিক টং ঘর বানিয়ে তাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে সেখানে স্থানীয় বাঙালীদের দোষারোপ করা হয়। 

এরপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী মিলন চাকমার মৃত্যু ও পাহাড়ীদের বাড়ি-ঘর পোড়ানোর অজুহাতে খাগড়াছড়িতে আধাবেলা সড়ক অবরোধের ডাক দেয় ইউপিডিএফ।

আজ (২১মার্চ) সকাল থেকেই অবরোধের নামে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে, সিএনজিতে আগুন, মোটরসাইকেল ভাংচুর ও গাছ কেটে সড়কে বিশৃঙ্খলাসহ নানা ভাবে নাশকতার চেষ্টা চালায় প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ)। 

খাগড়াছড়িতে আধাবেলা আধাবেলা সড়ক অবরোধ নানা বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ কোচগুলো সকালে নিরাপত্তাবাহিনীর সহায়তায় খাগড়াছড়ি পৌঁছে। জেলার অভ্যন্তরে হালকা যানবাহন চলাচল করলেও শহরে ছিল স্বাভাবিক। তবে শহরের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করলেও শহরের বাইরে বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে ইউপিডিএফ কর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় রাস্তায় টায়ারে আগুন লাগিয়ে দেয়। গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে।

জেলার রামগড়ের যৌথখামার এলাকায় সকালে অবরোধের নামে সড়কের পাশের বেশকিছু গাছ কেটে সড়কে ফেলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।পরবর্তীতে স্থানীয় বিজিবি জোন হতে বিজিবি সদস্যরা গিয়ে সড়ক থেকেগাছ সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এছাড়া সকাল থেকেই বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সহায়তা করে বিজিবি ও পুলিশ।

জেলার মাটিরাঙ্গায় অবরোধের নামে সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। সকালে মাটিরাঙ্গা ও গুইমারার মধ্যবর্তী বাইল্যাছড়িতে একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিক্সায় আগুন দেয় ইউপিডিএফের নেতা-কর্মীরা। এতে কোন যাত্রী হতাহত না হলেও পুড়ে যায় গাড়ির প্রায় সবকিছু। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। 

জেলার দূর্গম লক্ষ্মীছড়িতে অবরোধের নামে নাশকতা, মোটরসাইকেল ভাংচুর সাধারণ জনসাধারণকে মারধরের সময় অভিযান চালিয়ে ২ ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীকে আটক করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সকালে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার মংহলা পাড়া যাত্রী ছাউনী কাছে নাশকতার সময় বিউটি চাকমা (২৫) ও শুভ চাকমা (২২) নামের এই দুই সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়। অঅটককৃত বিউটি চাকমা (২৫) উপজেলার কলাবুনিয়া এলাকার সূর্যধন চাকমার ছেলে এবং শুভ চাকমা (২২) কতুবছড়ির বাসিন্দা বলে জানা গেছে। 

অবরোধ পালনের নামে ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কর্তৃক লক্ষ্মীছড়ি উপজেলাধীন মংহলা পাড়া যাত্রী ছাউনীর পাশে রাস্তায় বাঁশ বেধে রাস্তা অবরোধ করা হয়। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)র লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি রিটন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শুভধন চাকমা সড়কে অবস্থান নিয়ে এদিন নাশকতা সৃষ্টি করে। ভোর রাত থেকে তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সড়কে যাতায়াত করা মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং বাঙ্গালীদের মারধর করে। এসময় স্থানীয় এক মোটর সাইকেল চালক মোঃসাইফুল ইসলাম তার মোটরসাইকেল চালিয়ে সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় উক্ত সন্ত্রাসীরা তার গতিরোধ করে মোটরসাইকেলটি ভাংচুর করে এবং চালক বাঁধা দিতে চাইলে তাকে বেধড়ক মারধর করে। 

ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে লক্ষ্মীছড়ি জোনের একটি সেনাদল সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে এবং আহত মোটরসাইকেল চালককে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় সন্ত্রাসীরা সেনা সদস্যদের লক্ষ্য করে পেরেক লাগানো গাছের টুকরা দিয়ে আঘাত করে এবং এতে একজন সেনা সদস্য পায়ে আহতপ্রাপ্ত হয়। এসময় নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে বিউটি চাকমা (২৫) ও শুভ চাকমা (২২)কে আটক করা হয়। 

জেলার দীঘিনালা উপজেলায় আজ সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ইউপিডিএফের ডাকা আধা বেলা সড়ক অবরোধ চলে অনেকটা ঢিলে-ঢালা ভাবে। অবরোধ চলাকালে স্থানীয় ইজিবাইক ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি। 

জেলার পানছড়ি সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ। ইউপিডিএফ সমর্থিত কয়েকটি সংগঠনের ৫-৭ জন নেতাকর্মীকে এসময় পেট্রোল ঢেলে সড়কে আগুন দিয়ে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।