নিজেদের কোন্দল ঢাকতেই মানিকছড়িতে বিএনপির মিথ্যাচার 

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়িতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের আয়োজনে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা এবং যোগদান অনুষ্ঠান চলাকালে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে দূর্বৃত্ত কর্তৃক হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। 

১৯ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) বিকেল সাড়ে ৫টায় মানিকছড়ি সদরে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হক এনামের বাসার আঙিনায় পেন্ডেল টানিয়ে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। সভা চলাকালে বিকাল ০৫.৩০ মিনিটে সেখানে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ আনা হয়। 

এরপরপরই জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়ার পক্ষে প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে এ ঘটনায় সরাসরি বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীকে দায়ী করা হয়। 

প্রেস রিলিজে বলা হয়, শনিবার বিকালে মানিকছড়ি সদরে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হক এনামের বাসার আঙিনায় পেন্ডেল টানিয়ে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। সভা চলাকালে বিকাল ০৫.৩০ মিনিটে সেখানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী অংশ নেয় এই হামলায়। সন্ত্রাসী হামলায় মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, উপজেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি সদস্য মোঃ ইসমাইল ও মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হোসেন, মানিকছড়ি উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি কাঞ্চন মালা, উপজেলা যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, তিনট্যহরী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মন্জু ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুচ আলী সুমন, ২নং বাটনাতলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, মানিকছড়ি উপজেলা মহিলা দল নেত্রী ফরিদা মেম্বার ও সুমি আক্তার সহ ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হক এনামের বাসার গেইট ভেঙে প্রবেশ করে বাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। পরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের যাকে যেখানে পাচ্ছে মারধর করা হচ্ছে। ভয়ে কেউ হাসপাতালে যেতে পারেনি। আহত নেতাকর্মীরা গোপনে বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মেসি ও বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

মানিকছড়ি থানা অফিসার্স ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহনূর আলম জানান, বিএনপির সভা বা কর্মসূচি সম্পর্কে  পুলিশকে পূর্বে অবগত করা হয়নি। এমনকি ঘটনার পরও বিএনপির কোন নেতা এ বিষয়ে পুলিশকে কিছুই জানায়নি। মারধর ও হট্টগোলের গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে এবং এলাকায় নিরাপত্তার বাড়ানো হয়েছে।

তবে, এ ঘটনার পর সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ঘটনার সময়ের কয়েকজন প্রত্যেক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানা গেছে ঠিক ভিন্ন চিত্র। 

অতি সম্প্রতি, গত ২০ জানুয়ারি ৫১ সদস্য বিশিষ্ট মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা দেয় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে পদবঞ্চিতরা। গত ২৪ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি এম এ করিম। সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিত এক তরফা কমিটি বাতিল করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এ সময় সদ্য বিলুপ্ত কমিটির পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিএনপি নেতা আরব আলী চেয়ারম্যান, মুজিবুল হক বাহার, আলী নুর ও জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ২য় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির দূর্গ বলে পরিচিত খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় কয়েকশ বিএনপি কর্মী জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছিলেন। এদিন মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এসএম রবিউল ফারুক এবং মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের বিএনপি সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান রাহেলা বেগমের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের দুই সহস্রাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করে।

এছাড়া, ইতিপূর্বে “মানিকছড়িতে কমিটি গঠনকে ঘিরে বিএনপি এখনো দু’শিবিরে বিভক্ত” শিরোনামে পার্বত্য নিউজ নামের একটি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে একটি বিস্তারিত সংবাদও প্রকাশ করে। 

তবে শনিবার হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা বলছেন, মূলত নিজেদের আভ্যন্তরীন কোন্দল, কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়া নেতাদের হুমকি-ধামকি সহ নানা কারণে দলের একটি অংশের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকেই এ ঘটনা। 

এরপর, এ ঘটনায় নিজেদের দলীয় ইমেজ রক্ষায় তড়িঘড়ি করে প্রেস রিলিজ দিয়ে এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস থেকেই এমন মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে জেলা বিএনপি। 

এদিকে বিএনপির আভ্যন্তরিণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দলে থাকা বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘটিত হামলায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামীলীগের যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দীন, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো.জাহাঙ্গীর আলমসহ শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দলীয় অফিস থেকে বাজারসহ বিভন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।