শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২১
ছবি- সংগৃহীত।
পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। পানিশূন্য এসব এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাবে ছড়া বা কুয়োর পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কয়েক মাইল দূরে পাহাড়ি পথ হেঁটে মাথায় কিংবা কাঁখে করে পানি আনতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনের উপজেলার প্রফুল্লপাড়া, পাইয়্যংপাড়া, মরাটিলা, কাঠাল তলা, উল্টাছড়ি, আলীনগর, রসুলপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পানির হাহাকার দেখা যায়।
পাইয়্যং পাড়ার ইউপি সদস্য শিবু ত্রিপুরা জানান, ১৫০ পরিবারের জন্য একটি মাত্র ডিপটিউবওয়েল আছে তার এলাকায়। অনাবৃষ্টির ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এলাকার বসবাসকারী লোকজন বিশুদ্ধ পানির অভাবে হাহাকার করছে। খাবার পানি, ধোয়ামোছা এবং গোসলের পানির জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় প্রাকৃতিক উৎস পাহাড়ি ঝর্ণা, ছড়া ও বিকল্প গর্তে জমে থাকা পানির ওপর। অপরদিকে শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত অধিকাংশ ঝর্ণার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পানি সংগ্রহ করতে হয় পাহাড়ি ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি কিংবা টিলার নিচে তৈরি অগভীর গর্ত থেকে। অগভীর কুয়ায় চুইয়ে, চুইয়ে আসা পানি বাটিতে করে তুলে ছেঁকে কলসি ভরাতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। এভাবেই নিত্যদিনের পানি সংগ্রহে রীতিমতো সংগ্রাম চলে আমার দুটি গ্রামে। সাবেক ইউপি সদস্য বরেন ত্রিপুরা দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, কাশিপাড়া মিল্টন পাড়ার অধিকাংশ বৃদ্ধ, যুবক-যুবতী প্রতিদিন বহুদূর পাহাড়ি পথ হেঁটে পানি আনতে যেতে হয়। পাহাড়ের ঢালে খোঁড়া ছোট একটি গর্তে চুইয়ে চুইয়ে পানি বের হয়। সেই পানি বাটিতে তুলে একটু একটু করে কলসি ভরে নিজ নিজ বাড়িতে পানি আনা হয়। শীতকাল থেকে পাহাড়ে শুরু হয় পানির কষ্ট ও হাহাকার। সংগ্রহ করা এ পানি দিয়ে নিত্যদিনের কাজ করতে হয়, এ কষ্ট দীর্ঘদিনের।
দুর্ভোগের শিকার পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল আলী নগর, ওমরপুর, উল্টাছড়ির অনেকের সাথে কথা হয় দৈনিক চট্টগ্রামের এই প্রতিনিধির সাথে। তারমধ্যে উল্টাছড়ি হাই স্কুলের ছাত্রী আমেনা আক্তার, রাফিয়া বেগম, শাহানা আক্তার জানান, সরকার রিং টিউবওয়েল স্থাপন করলেও বর্ষাকালে পানি থাকলেও শীত শেষ হতে হতে পানি শুকিয়ে যায়। তখন আমাদের পানির খুব কষ্ট হয়। পানির পাম্পেও পানি আসে না। সরকারিভাবে স্থাপন করা টিউবওয়েলগুলো বসানোর সময় গভীরভাবে বেশী পাইপ দিলে হয়ত শুস্ক মৌসুমেও পানি পাওয়া যেত।
পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনুতোষ চাকমা জানান, ছড়া ও কূয়ার পানি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পেটের পীড়াসহ নানাহ চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর পানছড়ির উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নির্ধারণ করে থাকে। সে অনুপাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কাজ করে থাকে। এবছরও প্রায় ৩০০ গভীর -অগভীর নলকুপ বসানোর কাজ শেষের পথে। পাহাড়ের অধিকাংশ এলাকায় পাথর থাকায় মাটির গভীরে পাইপ নেওয়া যায় না। এছাড়াও এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়