শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২১
ছবি- সংগৃহিত।
জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের জনপদ মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের মধ্য আদামের খামারবাড়ি এলাকায় সুপ্রিয় চাকমার বাড়ি। মহালছড়ি উপজেলা থেকে মুবাছড়ি ইউনিয়ন হয়ে সুপ্রিয় চাকমার বাড়িতে যেতে বেশ কয়েকটি পাহাড় পাড়ি দিয়ে হয়।
কাঠ দিয়ে নানা জিনিস তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সুপ্রিয় চাকমা
সুপ্রিয় চাকমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বেড়ার ঘরজুড়ে কাঠের শিল্পকর্ম। কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন বরণ্য ব্যক্তি, বন্যপ্রাণী, বৌদ্ধমূর্তির অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গামারি, কাঁঠালসহ বিভিন্ন কাঠের আকৃতি পরিবর্তন করে সুপ্রিয় চাকমা এসব কারুকাজ করেছেন। তার এসব কাজ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া প্রচণ্ড আগ্রহ এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে দারুণ এই দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি। কাঠ খোদাই করে এক একটি শিল্পকর্ম করতে তার সময় লাগে ৭ থেকে ৮ দিন। একেবারে সনাতনী যন্ত্রপাতি দিয়ে কাঠের ওপর কারুকাজ করেন তিনি।
প্রতিবন্ধী কারুশিল্পী সুপ্রিয় চাকমা বলেন, অনেক আগে আত্মীয়-স্বজনের সন্তানদের বিভিন্ন ব্যবহারিক খাতা অংকন করতাম। পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের রাউজানের একটি বিহারের অধ্যক্ষ আমাকে বিহারের জন্য কাঠ খোদাই করে হাঁস বানানোর জন্য অনুরোধ করেন। সংশয় নিয়ে কাজ শুরু করলেও সেই কাজে সফল হই। এরপর থেকে চেষ্টা চালিয়ে কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন বন্যপ্রাণির অবয়ব তৈরি করেছি। পরবর্তীতে কাঠ দিয়ে বিভিন্ন বরণ্য ব্যক্তির অবয়ব তৈরি করেছি। কাঠ খোদাই করে বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছি। আমার এসব কাঠের শিল্পকর্ম অনেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যান।
সুপ্রিয় চাকমার প্রতিবেশী আলোক বিকাশ চাকমা ও চাচাতো ভাই রতন বিকাশ চাকমা বলেন, অনেক আগে থেকেই কোনো কাজ করতে পারে না সুপ্রিয়। সে অসচ্ছল। কয়েক বছর আগে থেকে কারুশিল্পের কাজ শুরু করে। তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবে সে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে কাঠের ওপর কারুকাজ করে। এসব শিল্পকর্ম দেখতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। এলাকার অনেকে আগ্রহ নিয়ে এখানে কাজ শিখতে আসে। আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় শক্ত কাঠ খোদাই করতে অনেক সময় লাগে।
পরিবারের সকল কাজের পাশাপাশি স্বামীর এসব কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন সুপ্রিয় চাকমার স্ত্রী জ্ঞানবালা চাকমা। তিনি বলেন, আমার স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম, চোখেও ভালো করে দেখতে পান না। কৃষি কাজও করতে পারেন না। কৃষিসহ সব কাজ আমি করি। তিনি সারাদিন বাড়িতে নানা রকম কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করেন। তবে এসব কাজ করার সরঞ্জাম নেই। অভাবের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে মাসে ৭৫০ টাকা ভাতা পান সুপ্রিয় চাকমা।
নিজের শিল্পকর্মকে এগিয়ে নিতে সরকারের সহায়তা চান সুপ্রিয় চাকমা। সরকারের কাছে দুর্যোগ সহনীয় ঘরও দাবি করেন দুর্গম পাহাড়ের প্রতিভাবান এই কারুশিল্পী।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্রতিভাবান কারুশিল্পী সুপ্রিয় চাকমা সর্ম্পকে আগে তেমন কিছুই জানতাম না। বর্তমানে তিনি সরকারের অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা পাচ্ছেন। তার শিল্পকর্মকে এগিয়ে নিতে আমরা আর্থিকভাবে সহায়তা করব।
করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের। এছাড়া যেকোনো সংবাদ বা অভিযোগ লিখে পাঠান এই ইমেইলেঃ [email protected]
দৈনিক খাগড়াছড়ি Dainik Khagrachari
সর্বশেষ
জনপ্রিয়